‘দেবী দুর্গা ও মহিষাসুর’ নিয়ে বিতর্কে উত্তাল সংসদ ৷ বিতর্কের শুরু, জেএনইউ-তে নাকি মহিষাসুরের জন্য ‘শহীদ দিবস’ পালন করা হয় ৷ কিন্তু এই সমস্ত তর্কের উল্টো পিঠে লুকিয়ে আছে একটা ‘সত্যি’ যেটা খুব কম মানুষই জানেন ৷ সত্যিই ভারতে বেশ কিছু আদিবাসী এলাকায় ভগবানরূপে পূজিত হন মহিষাসুর ৷ এই আদিবাসীরা মনে করেন, ‘সত্যি’-টা কোনওরকম ভেদাভেদ ছাড়াই সামনে আসা উচিত ৷ মহিষাসুরের আরাধনা করেন এমন এক আদিবাসী সম্প্রদায়ের মুখিয়া হলেন সুষমা অসুর ৷ এই বিষয়ে সুষমা অসুরের বক্তব্য, ‘আমরা সবাই একই মায়ের গর্ভ থেকে জন্মেছি ৷ তাই কে অসুর আর কে দেবী, আর কে দলিত অথবা কে উচ্চবর্ণ তা নিয়ে ঝগড়া করার কোনও অর্থ হয় না ৷ আমরা মনে করি, অসুর আমাদের রাজা ছিলেন আর দেবী দুর্গা তাঁকে হত্যা করেন ৷ সবসময় তাঁকেই অশুভ শক্তি বলে কেন দেখানো হয় জানি না ৷’
ঝাড়খণ্ডের অধিবাসী এই অসুর সম্প্রদায়ের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার ৷ অসুরকে নিজেদের সম্প্রদায়ের রাজা হিসেবে পুজো করে এই আদিবাসী সম্প্রদায় ৷ এরা মহিষাসুরের মৃত্যুর দুঃখ পালন করে ৷ বিশেষজ্ঞদের হিসাবে, মহিষাসুরের উপাসক আদিবাসী গোষ্ঠী শুধু ঝাড়খণ্ডেই নয়, বিহার, মধ্যপ্রদেশ এমনকী, পশ্চিমবঙ্গেও দেখা যায় ৷
সুষমা অসুর জানিয়েছেন যে, তাঁরা দেবী দুর্গার পুজো করেন না ৷ মহিষাসুর বধের দিন অর্থাৎ দশমী বা দশেরা অন্যরকমভাবে পালন করে অসুর সম্প্রদায় ৷ দেবী দুর্গার ত্রিশূলের আঘাতে মহিষাসুরের দেহের যে যে জায়গা থেকে রক্তপাত হয়েছিল, অসুর সম্প্রদায়ের সব লোক দশমী বা দশেরার দিন নিজের শরীরের সেই সব জায়গায় তেল লাগান ৷ যেমন- নিজের নাভি, কান, নাক প্রভৃতি ৷ এর পর ৯ দিন ধরে চলে শোক পালন ৷ এই অসুর সম্প্রদায় ছাড়াও ‘আলাসা সাঁওতাল’ নামক আদিবাসী সম্প্রদায়ও মহিষাসুরের সঙ্গে সঙ্গে রাবণের মৃত্যুর শোক পালন করে ৷