পূর্ব মেদিনীপুরের লাল কাঁকড়ায় ভরা, নিরিবিলি শান্ত সমুদ্র বালিয়াড়ি বাগুড়ান জলপাই। জনকোলাহল ছাড়াই সমুদ্রের জল খেলা করে বালিয়াড়ি জুড়ে। জোয়ারের জল ও রোদের আলোয় অপরূপ রূপ নেয় বাগুড়ান জলপাই বেলাভূমি। এখনো সেভাবে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়নি। বা বলা ভালো এখনো এই সমুদ্র সৈকত মানুষের কাছে ততটা পরিচিত নয়। তাই এই সমুদ্র সৈকত মেলে ধরেছে অপরূপ প্রাকৃতিক রূপ সৌন্দর্য। বালিয়াড়ি জুড়ে অসংখ্য লাল কাঁকড়া দল ও ঝিনুক খেলা করে নিভৃতে। সম্প্রতি ইয়াসের ক্ষতচিহ্ন লক্ষ্য করা যায় বালিয়াড়ি জুড়ে তবুও বাগুড়ান জলপাই সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য্যে ভাটা পড়েনি। নিরালা শান্ত সমুদ্র সৈকতে নির্জনে ঢেউয়ের আনাগোনা দেখতে দেখতে কখন সময় গড়িয়ে যায় টের পাওয়া যায় না।
বাগুড়ান জলপাই নামটা হয়তো অনেকের কাছে এখনো অচেনা। পূর্ব মেদিনীপুর তথা পশ্চিম বাংলা পর্যটক মানচিত্রে নতুনতম সংযোজন সংযোজন। কাঁথি শহর থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে বাগুড়ান জলপাই। কাঁথি থেকে জুনপুট সড়ক হয়ে পৌঁছানো যায় আধ ঘন্টায়। এই বিচের দৈর্ঘ্য খুব বিস্তীর্ণ নয়, কিছুটা যেন খাঁড়ির মত হয়ে সমুদ্র ঢুকে এসেছে ভিতর দিকে। তবে ঝড়ো শব্দের মাতন লাগা ঘন ঝাউ বন আছে। আছে দিগন্ত ছুঁয়ে ঢেউয়ের মাথায় নাচতে নাচতে এগিয়ে চলা মাছ ধরার ট্রলার আর ডিঙির সারি। আর আছে জনমানব শূন্য নির্জনতা। সেই নির্জনতার টানেই সামান্য সংখ্যক পর্যটক এখানে আসেন ছুটি কাটাতে, আর আসেন কিছু ছবি শিকারির দল।
মন্দারমণি, জুনপুটের মতই ঢালু তটভূমি। অনেকটা জলের ওপর দিয়ে হেঁটে চলে যাওয়া যায় সমুদ্রের ভিতরে। এখানে সমুদ্রের ঢেউ খুব উত্তাল নয়, তবে জোয়ারের সময় তার তেজ আর গর্জন দুইই বাড়ে। মানুষের আনাগোনা কম হওয়ায় সুন্দর সুন্দর ঝিনুক এখনও কুড়িয়ে পাওয়া যায় এই বেলাভূমিতে। আর অসংখ্য লাল কাঁকড়া। তারা গর্তের ধারে শুড় উঁচিয়ে বসে থাকে, একটু কাছে এগুলোই গর্তের মধ্যে ঢুকে যায়। জোয়ারের সময় জল এগিয়ে আসে অনেকটাই, প্রায় ঝাউবনের কাছাকাছি। ভাটার সময় আবার গড়িয়ে যায় পিছনে। এইভাবে খেলা চলে নিরন্ত্র এক নির্জন প্রান্তরে। সূর্য ওঠে, আবার অস্ত যায়। গোধূলির আলো তে এই সমুদ্র সৈকত হয়ে ওঠে আরো মায়াবী। সেই মায়ার টান উপেক্ষা করার ক্ষমতা হারাবে পর্যটকেরা। গোধূলি আলো সমুদ্র সৈকতে ঘোরাফেরা করতে করতে ঝুপ করে নেমে আসবে অন্ধকার।
শহুরে কোলাহল জনজীবন থেকে দূরে গ্রামের কোলে এই সমুদ্র সৈকত। ফলে নেই মানুষের চেনা ভিড়। দেখা মেলে না মানুষজনের। উপকূলবর্তী জেলেপাড়ার লোকজনের মাছ ধরতে যাওয়া আসা ছাড়া সমুদ্র সৈকতে মানুষের দেখা পাওয়া ভার। নির্জন সৈকতে শীতল বাতাস ও ঢেউ আনাগোনায় মনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। এই নির্জনতাকে ভেঙে দেয় পাখির ডাক ও সমুদ্রের গর্জন। পর্যটক এর মনের নির্জনতাকে ভেঙে দেওয়ার জন্য সমুদ্র সৈকতকে দেখলে মনে হয় লজ্জায় লাল হয়ে উঠেছে। কিন্তু তা আসলে সমুদ্র বালিয়াড়ি জুড়ে অসংখ্য লাল কাঁকড়ার দল।
এই অজানা সমুদ্র সৈকতকে জানতে নিজেকে নিজের কাছে ফিরে পেতে পুজোয় ঘুরে আসুন বাগুড়ান জলপাই। কাঁথি রেলস্টেশন বা কাঁথি সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ড থেকে সহজেই বাগুড়ান জলপাই আসা যায়। মাত্র ১৫ কিলোমিটার রাস্তা। কাঁথি সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ড থেকে ছোট গাড়ি অটো প্রভৃতি যাতায়াত করে বাগুড়ান জলপাই। সময় লাগে আধঘণ্টা বা তার একটু বেশি। হোটেলে আগে থেকে জানিয়ে রাখলে ওরাই করে রাখে গাড়ির ব্যবস্থা।
এই সমুদ্র সৈকতটি এখনও সেভাবে পরিচিতি লাভ না করায়। পর্যটকদের আনাগোনা সংখ্যা খুবই কম। সমুদ্রের ধারে দুই একটি চা দোকান ছাড়া আর কিছুই নেই। তবে তাদের আপ্যায়ন মুগ্ধ করার মতো। পাওয়া যায় লেবু চা বললে ব্যবস্থা করে দেয় জ্যান্ত কাঁকড়া। এখানে রাত্রিবাসের জন্যে রয়েছে একটি মাত্র ঠিকানা। সমুদ্র সৈকত থেকে ৫০০ মিটার দূরে রয়েছে একটি মাঝারি মানের হোটেল। হোটেল নিরালয়। এদেরই রয়েছে কয়েকটি টেন্ট। নির্জন অন্ধকারে ক্যাম্প ফায়ার করার আদর্শ জায়গা সমুদ্র সৈকত বাগুড়ান জলপাই। হোটেল নিরালয়ে রাত্রিবাসের জন্য পাবেন এসি ও নন এসি রুম এবং টেন্ট। ভাড়া সাধ্যের মধ্যেই। ভাড়া ১৩০০ - ৩৩০০ টাকা প্রতিদিন। খাওয়ার দাওয়ারের খরচ আলাদা। হোটেল ভাড়া করার জন্য যোগাযোগ ৯৪৩৪০১২২০০। (তথ্য-- সৈকত শী)