

মন্ত্র স্পষ্ট বলছে যে এই দেবীর গাত্রবর্ণ শ্বেত, তাঁর কণ্ঠে শোভা পায় তুষারের মতো ধবল কুন্দহার, তিনি শুভ্র বস্ত্রে আবুত করেন নিজেকে, আসীন থাকেন শ্বেত পদ্মে; এমনকি হাতের বীণাটিও সাদা! সেই জন্যই দেবী সরস্বতীর আরেক নাম মহাশ্বেতা!


তাহলে সরস্বতী পুজোর দিনে বাসন্তী বা হলুদ রং পরার তাৎপর্য কী? এই প্রসঙ্গে সবার আগে তাকানো যায় ঋগ্বেদের দিকে। বেদ সরস্বতীকে অপার্থিব আলোকরূপা বলে বর্ণনা করেছে। জানিয়েছে যে এই দেবী অতীব দ্যুতিময়ী, তিনি তাঁর আলোকচ্ছটায় স্বর্গ এবং মর্ত্যের অনেকটাই আলোকিত করে রাখেন। আলোর রং হলুদ, অতএব এই দিক থেকে সরস্বতী এবং বাসন্তী বা হলুদ রঙের একটা যোগসূত্র পাওয়া যায়।


আবার ফিরে আসতে হয় বেদের কাছেই। কেন না, বৈদিক ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেবী এই সরস্বতী-ই! তো, বেদ বলছে, যখন ঋষিরা যজ্ঞাগ্নি প্রজ্জ্বলিত করেন, সামগানে মুখর হয় সভাস্থল, তখন দেবী সরস্বতী তুষ্ট হয়ে আবির্ভূতা হন যজ্ঞবেদিতে, উপাসনার ফলস্বরূপ জলদান করে তৃপ্ত করেন ভক্তকে। যজ্ঞের আগুনের শিখার হলুদ রং এবং সরস্বতীর মধ্যে এভাবে দ্বিতীয় যোগসূত্রটি খুঁজে পাওয়া যায়।


কিন্তু এই সব কারণ দূরে সরিয়ে রেখে আমাদের এবার আসতে হবে ঋতুবৈচিত্র্যে। দেবীর বাৎসরিক পূজার তিথিটি নির্দিষ্ট হয়েছে বসন্তকালের পঞ্চমীতে। বসন্তের আগমনে প্রকৃতি পুষ্পে, শস্যে সমৃদ্ধ হয়, যার অনেকাংশ জুড়ে থাকে হলুদ রং। সেই জন্যই হলুদ রংকে বসন্ত ঋতুর সাদৃশ্যে বাসন্তী বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। দেবীর পূজার এই তিথিমাহাত্ম্য স্মরণে রেখেও বাসন্তী রঙের পোশাক পরা হয় সরস্বতীর আরাধনায়।


এক্ষেত্রে বাদ দেওয়া যায় না সূর্যের উত্তরায়নের প্রসঙ্গও। বসন্তকাল সূর্যের উত্তরায়ণ গতির দ্যোতক, এই সময় থেকে সূর্যালোক তীব্র এবং গাঢ় হলুদ হতে শুরু করে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেও উত্তরায়ণ কালে সরস্বতীর উপাসনায় হলুদ রঙের বস্ত্র পরার রেওয়াজ আছে। শিখধর্মের অন্যতম পুরোধা মহারাজা রঞ্জিৎ সিংও (Maharaja Ranjit Singh) এই বিষয়টি মাথায় রেখে নিজেও বসন্ত পঞ্চমীতে হলুদ রঙের বস্ত্র পরতেন, অন্যদেরও তা অনুসরণ করায় উৎসাহ দিতেন।