প্রমাণই সব। আধুনিক যুগে যে কোন ঘটনাকে বিশ্বাস করতে আমাদের প্রয়োজন হয় প্রমাণের। পার্থিব সব কিছুরই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা লেগে থাকে প্রতি নিয়ত। বিশ্বাস আর বিজ্ঞানে কোনও সংঘাতও নেই হয়ত সবসময়। তবে এই পৃথিবীতেই এমন অনেক ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যার পূর্ণ বা কিছুটা ব্যাখ্যা দিতেও অপারগ হয়েছে বিজ্ঞান। পরীক্ষানিরীক্ষা, বিশেষজ্ঞের মতামত পেরিয়ে সেই সব ঘটনা শুধু জন্ম দিয়ে গিয়েছে রহস্যের। কিন্তু সমাধান পাওয়া যায়নি। পৃথিবীর তেমনই পাঁচটি রহস্যময় ঘটনার কথা রইল।
মাসের পর মাস টানা নাচ!
১৫১৮ সাল, জুলাই মাসে ফ্রান্সের স্ট্রসবার্গে মিসেস ত্রোফফেয়া নামের এক নারী হঠাৎ নাচতে শুরু করেছিলেন। এরপর উপস্থিত সকলেই ওই মহিলার সঙ্গে নাচতে শুরু করেন। কিছুতেই তাঁদের নাচ থামছিল না। সপ্তাহ কেটে যায়। আরও বহু মানুষ এসে সেই নাচের সঙ্গে যোগ দেয়। এক মাস পর শত-শত মানুষ সেই অবিরাম নাচে যোগ দেয়। অনেকেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। বাকিরা নাচতে থাকেন। শহরের তৎকালীন শাসকরা ভাবলেন, এ ভাবে অবিরত নাচতে দিলে নিশ্চয়ই ক্লান্ত হয়ে নাচ থেমে যাবে সকলের। তাই তাঁরা শহরের টাউনহলে সমস্ত মানুষের নাচার ব্যবস্থা করে দিলেন। যাদের মধ্যে ক্লান্তি, হার্ট অ্যাটাক ও উচ্চ রক্তচাপে প্রাণ হারান প্রায় ৪০০ জন মানুষ। কিন্তু কেন সেই নাচ শুরু হয়েছিল, তার কোন ব্যাখ্যা মেলেনি। অনেকে দাবি করেন, বহু দিন ধরে অন্ধকার ও বদ্ধ ঘরে জল আর পাঁউরুটি খাইয়ে রাখার পর বাইরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল কিছু ব্যক্তিকে। তাঁদের মধ্যেই এই নাচের ঝোঁক দেখা যায়। কিন্তু এর কোন প্রমাণ মেলেনি।
১৯৪১ সালের ছবিতে আজকের মানুষ!
মনে হতে পারে এটি একটি সাধারণ ছবি। কিন্তু ভালো করে দেখুন একবার ছবিটি। এটি তোলা হয় ১৯৪১ সালে কানাডার গোল্ড ব্রিজে। সেই ছবিতে আরও অনেকের সঙ্গে ছিলেন একজন ব্যক্তি, কিন্তু তিনি সকলের থেকেই আলাদা। বাকিদের পোশাকের সঙ্গেও কোন মিল ছিল না তাঁর। ওই ব্যক্তির পোশাক মোটেই ১৯৪১ সালের মতো ছিল না, বরং তাঁর পোশাক যেন ছিল আজকের দিনের। ব্যক্তিটির পরনে ছিল একটি চেন লাগানো হুডি, টি-শার্ট। আরও অবাক করা বিষয় ছিল, ১৯৪১ সালে মানুষটির হাতে ছিল একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা! এও কি সম্ভব! এই ব্যক্তিকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। রহস্যই থেকে গিয়েছেন তিনি।
সবুজ দুই ভাইবোন!
সেই দ্বাদশ শতাব্দীর ঘটনা। ইংল্যান্ডের উলপিট এলাকায় হঠাতই একজোড়া ভাই বোনের এসে হাজির। সবদিক থেকেই তাঁরা আলাদা। সাধারণ মানুষের মতো ছিল দেখতে ছিল বটে, তবে তাদের গায়ের রং ছিল অস্বাভাবিক সবুজ রঙের। দুই ভাই-বোনের কথাও কেউ বুঝত না। কারণ তাঁদের ভাষা বোঝা ছিল অসাধ্য। খাওয়া বলতে ছিল শুধু কাঁচা শিম। কিছুদিন পরই অবশ্য ভাইটি মারা যায়, বেঁচে থাকে বোন। মেয়েটিকে ধীরেধীরে ইংরেজি ভাষা শেখানো হয়। খাওয়ানো হয় অন্যান্য খাবারও। ধীরে-ধীরে মেয়েটির গায়ের সবুজ রং পরিবর্তন হতে শুরু করে। বাকিদের সে জানায়, দুই ভাই-বোন সেন্ট মার্টিন্স ল্যান্ড থেকে এসেছে। তার কথায়, সেন্ট মার্টিন্স হল মাটির নিচে থাকা এক রাজ্য, যেখানে সবার গায়ের রং সবুজ সকলের। যদিও সে কথা বিশ্বাস করেনি কেউই। কিন্তু এই দুই ভাইবোন কোথা থেকে এল, তাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ আবার তাঁদের ভিনগ্রহের প্রাণী বলেও মনে করেছিলেন।
দ্য হাম
১৯৬০ সাল নাগাদ কানাডা, নিউ ম্যাক্সিকো, স্কটল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনেকেই এক অদ্ভূত শব্দ শুনতে শুরু করেছিলেন। অনেকটা যেন গাড়ির ইঞ্জিন চলার মতো শব্দ। কানে তুলো গুঁজেও সেই আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল, সকলে এই আওয়াজ শুনতে পেতেন না। শব্দটির নামকরণ করা হয় দ্য হাম। জানা যায়, শতকরা মাত্র ২ ভাগ মানুষ 'হাম' শুনতে পেতেন। সাধারণত বাড়ির ভিতরে থাকার সময় এবং গভীর রাতে হামের আওয়াজ আরও জোরে শোনা যেত। পাথরে পরিণত হওয়া হিপ্পিদের কান্না, জনগণের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে সরকারের কূটকৌশল, মাটির নীচে থাকা ভিনগ্রহীদের যান UFO-এর ইঞ্জিনের শব্দ বলেও এই আওয়াজকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি কিছুরই।
হঠাৎ হারিয়ে গেল বিমান
এই সেদিনের কথা। ২০১৪ সালে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০। দিনটা ৮ মার্চ, ২০১৪। মালয়েশিয়া থেকে বেজিং যাচ্ছিল একটি বিমান। তাতে ছিলেন ২২৭ জন যাত্রী এবং ১২ জন ক্রু মেম্বার। বিমানের ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে চালকের শেষ ভয়েস কানেকশন ঘটে টেক অফের এক ঘণ্টা পর এবং তারপরই রাডার থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় বিমানটি। মালয়েশিয়ার সামরিক রাডারে প্রায় এক ঘণ্টার পর বিমানটি ট্র্যাক করা হয়, তখন আন্দামান সাগর পর্যন্ত রাডারের মধ্যে ছিল বিমানটি। অথচ বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনও সংকটের সংকেত, খারাপ আবহাওয়ার সতর্কবাণী বা প্রযুক্তিগত কোন সমস্যার কথা বলাই হয়নি। অনেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ভারত মহাসাগরেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে এই বিমানটি। কিন্তু গোটা অঞ্চল তন্নতন্ন করে খোঁজ চালিয়েও বিমানটির কোন হদিশ পাওয়া যায়নি।