

যে চতুর্থী তিথি সিদ্ধিদাতা গণেশের উদ্দেশে নিবেদিত, তাকেই বলা হয়ে থাকে গণেশ চতুর্থী। পঞ্চাঙ্গ মতে ১৫ ফেব্রুয়ারি পড়েছে ২০৭৭ বিক্রম সম্বতের মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে। যাকে মাঘী গণেশ জয়ন্তীও বলা হয়। জয়ন্তী অর্থে জন্মদিন। এই প্রসঙ্গে এসে বলে রাখা ভালো, এই গণেশ চতুর্থী হরগৌরীর সন্তানের জন্মদিন উপলক্ষ্যেই উদযাপিত হয়ে থাকে।


তাহলে কি ধরে নিতে হবে যে গণেশের জন্মদিন বছরে দু'বার পালন করাটাই নিয়ম? এই কূটকচালির একটা কারণ রয়েছে। যদি গণেশ চতুর্থী ২০২১ বলে Google Search করা হয়, তাহলে দেখা যাবে যে তারিখটা পড়েছে ১০ সেপ্টেম্বর। সাধারণত আমরা জানি যে দুর্গাপুজোর আগে আগেই মহারাষ্ট্রে পালিত হয় গণেশ চতুর্থী। অতএব, আজকের দিনটিকেও যদি গণেশ চতুর্থী বলি, তাহলে দেখা যাচ্ছে যে দেবতাটির জন্মদিন আমরা পালন করছি বছরে দু'বার। তা কী করে হয়?


গণ্ডগোলটি আসলে লুকিয়ে রয়েছে পুরাণের ধারাভাষ্যে। নানা পুরাণ একই ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন সময় বর্ণনা করে, একই ঘটনা ভিন্ন ভিন্ন তারিখ নির্ধারণ করে। ঠিক সেই ভাবেই গণেশের জন্মদিন কবে, অর্থাৎ কোন চতুর্থী তিথিতে তাঁর জন্মদিন উদযাপন করা বাঞ্ছনীয়, এই মর্মে দুই দলে ভাগ হয়ে গিয়েছে পুরাণগুলো। স্কন্দপুরাণ বলছে যে ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন গণেশ।


আবার, বাকি সব পুরাণ, বিশেষ করে ব্রহ্মবৈবর্তের মত- মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিটিকেই সাব্যস্ত করতে হবে গণেশের জন্মদিন রূপে। স্কন্দপুরাণ যেহেতু দাক্ষিণাত্য এবং মহারাষ্ট্রে জনপ্রিয়, সেহেতু দেশের ওই সব অঞ্চলে গণেশ চতুর্থী উদযাপিত হয় ভাদ্র মাসে। অন্য দিকে, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের রচনাস্থল এবং জনপ্রিয়তা বঙ্গদেশ, তাই এখানে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষেই গণেশ চতুর্থী উদযাপনের প্রথা প্রচলিত।


তবে জন্মতিথি সংক্রান্ত মাসটি নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও উপাসনার নিয়মে কোনও বিরোধ নেই। গণেশের গাত্রবর্ণ লাল, তাই এই রং তাঁর বিশেষ প্রিয় বলে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে যে ৫ সংখ্যাটিও তাঁর অতীব প্রিয়। তাই এই দিন পাঁচটি লালরঙের ফুল, পাঁচটি লালরঙের মিষ্টি, পাঁচটি প্রদীপ সিদ্ধিদাতার উদ্দেশে নিবেদনের রেওয়াজ আছে।