*ইয়াসের প্রভাবে রেকর্ড বৃষ্টিপাত মালদহে। ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় তিনশো মিলিমিটার। মালদহ যা সর্বকালের রেকর্ড বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। যার জেরে বৃহস্পতিবার রাতে ভাসল শহর। এমনকি জলবন্দি অবস্থা শুক্রবার দিনভর। এর আগে ১৯৯৮ সালে মালদহ শহরে অতি ভারী বৃষ্টি এবং বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই সময়ে পরিস্থিতি এত খারাপ হয়নি। অতি ভারী বৃষ্টির জেরে ইংরেজবাজার পুরসভার ২৯ টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ২০টি ওয়ার্ড কমবেশি জলমগ্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই জল থৈ থৈ মালদহ মেডিক্যাল কলেজ। জলমগ্ন জেলার সবচেয়ে বড় বাজার বলে পরিচিত মালদহের নেতাজি পুরবাজার। তথ্য ও ছবিঃ সেবক দেবশর্মা।
*দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন বাজারে প্রচুর দোকানে জল ঢুকে যায়। রাতের দিকে শহরের একের পর এক ওয়ার্ডে পাড়ায় পাড়ায় বাসিন্দাদের বাড়ির ভেতরে জল ঢুকে পড়ার খবর মেলে। সকালে একাধিক এলাকায় বাসিন্দাদের মধ্যে বিক্ষোভ দেখা যায়। শহরের ঘোড়াপীর মোড় এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সকাল থেকেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র-সহ প্রশাসনের কর্তারা। শহরের বিভিন্ন এলাকায় জমা জল বের করতে পাম্প কাজে লাগানো হয়। মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগ, মেল মেডিসিন বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত জলমগ্ন ছিল।
*ওয়ার্ডের মধ্যে জল ঢুকে পড়ায় সমস্যায় পড়েন রোগী ও পরিজনেরা। এরই মধ্যে কোন রকমের চিকিৎসার পরিষেবা চালু রাখার চেষ্টা করেন চিকিৎসক, নার্সিং স্টাফ, স্বাস্থ্যকর্মীরা। মালদহে গত ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত সর্বকালের রেকর্ড বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। সেচ দফতর সূত্রে খবর, এ দিন সকাল সাড়ে আট'টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় মালদহে জেলা সদর ইংরেজবাজারে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০৯.৩ মিলিমিটার। আর মালদহ কৃষি দফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় মালদহে ইংরেজবাজারে বৃষ্টির পরিমাণ ২৯৫ মিলিমিটার।
*পুরাতন মালদহে বৃষ্টি হয়েছে ২৯৯ .১ মিলিমিটার। কৃষি দফতরের সূত্রে খবর, গত ৭০ বছরে সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী মালদহে ২৪ ঘন্টা এত বৃষ্টিপাতের নজির নেই। মালদহ শহরের ঘোড়াপীর এলাকায় এ দিন সকালে জলবন্দি দশায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন ২৫ এবং ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। একাধিক জায়গায় পাম্প বসিয়ে শহর জল মুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে পরিদর্শনে বেরিয়ে আশ্বস্ত করেন জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র। করোনা পরিস্থিতিতে বিধি-নিষেধ চলায় দোকান বাজার বন্ধ থাকাকালীন অতিবৃষ্টিতে একের পর এক বাজার এলাকায় জল ঢুকে পড়ে। জেলার ব্যবসায়ীদের দাবি অন্তত আড়াইশো কোটি টাকার ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে শহরে। অতীতে কখনও এমন ভাবে শহর ভাসেনি বলে দাবি করেন জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক জয়ন্ত কুন্ডু।
*মালদহের ইংরেজবাজার পুরসভার পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগেই। বর্তমানে পুরসভার প্রশাসক পদে রয়েছেন মহকুমার শাসক। এই অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে এদিন তৎপর হয় জেলা প্রশাসন। তবে বাসিন্দাদের ক্ষোভ গত কয়েক বছরে শহরে একের পর এক জলাজমি ভরাট হয়ে জল বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নিয়মিত নর্দমা সাফাই না হওয়ার এত ভয়াবহ ভাবে ভেসেছে শহর। ফলে ভুক্তভোগীরা দুষছেন ইংরেজবাজার পুরসভা কর্তৃপক্ষকে।