আমফান, ইয়াসের পর এবার মোকা! বর্তমানে এই ঘূর্ণিঝড়ই বাড়াচ্ছে উদ্বেগ। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে হাওয়া অফিস। আইএমডি-র তরফে জানানো হয়েছে যে, গত ৮ মে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ এবং দক্ষিণ আন্দামান সাগর অঞ্চলে একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। আশঙ্কা করা হয়েছিল যে, ৯ মে আরও শক্তি বাড়িয়ে এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। আর সেটাই হয়েছে। আগামী ১০ মে-র মধ্যে তা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় মোকা-র রূপ নেবে বলেও আশঙ্কা। আপাতদৃষ্টিতে মনে করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের দিকেই এগোবে ঘূর্ণিঝড়টি।
কিন্তু এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম নিয়ে প্রথম থেকেই তৈরি হয়েছে সংশয়। ‘মোচা’ না ‘মোকা’ - এই নিয়েই চলছে তরজা! আদতে ঘূর্ণিঝড়টির আসল নাম হল ‘মোকা’। এই নামকরণের পিছনে রয়েছে পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইয়েমেন। আসলে লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত বন্দর শহর মোকা। বিশ্বজোড়া এখানকার মোকা কফির সুনাম। এই শহরের নামেই মূলত সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছে ইয়েমেন। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন ঘূর্ণিঝড়ের এই সব অনন্য নামের তাৎপর্য? কেনই বা নামকরণ হয় কিংবা কারা এই নামকরণ করে? সেটাই আজ জেনে নেওয়া যাক!
কেন নাম দেওয়া হয় ঘূর্ণিঝড়ের?
আসলে সংখ্যা কিংবা প্রযুক্তিগত কোনও নাম মনে রাখার তুলনায় সাধারণ নাম মনে রাখা সহজ। আর তাই সতর্কতা সংক্রান্ত খবর এলে মানুষ চট করে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেখেই তা চিহ্নিত করতে পারে। এখানেই শেষ নয়, বিজ্ঞানী এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীরও এই নামের জন্য সুবিধা হয়। কীভাবে? তাঁরা সহজ নামের মাধ্যমেই মানুষের মধ্যে সচেতনতা এবং সতর্কতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারেন।
কীভাবে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হয়?
বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে তৈরি হওয়া ক্রান্তীয় বা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়ার চুক্তি করেছে ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিকাল অর্গানাইজেশন এবং এশিয়া ও প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন। ২০০০ সালের এই চুক্তির প্যানেলে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, মলদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশ। এর পর কী সূত্র ধরে একটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হবে, ২০০৪ সালে সেই সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে এই প্যানেলে যুক্ত হয় ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং ইয়েমেনের মতো দেশ।
এই সব নাম কারা নির্ধারণ করে?
সারা বিশ্বের প্রতিটি মহাসাগরীয় অঞ্চলে যেসব ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়, তাদের নাম দেয় আরএসএমসি এবং টিসিডব্লিউসি। আর গোটা পৃথিবীতে আরএসএমসি রয়েছে মোট ৬টি। আইএমডি-ও এরই অন্তর্ভুক্ত। আরএমসি নয়াদিল্লি ট্রপিক্যাল সাইক্লোন সেন্টারই বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের নামের দায়িত্বে রয়েছে।
নামকরণ সংক্রান্ত কিছু নিয়ম:
ওই প্যানেলের সদস্য দেশগুলির নাম বর্ণানুক্রমে তালিকাভুক্ত করা হয়।
নামগুলো সম্পূর্ণ নতুন হতে হবে। আগে ব্যবহৃত নাম ফের ব্যবহার করা যাবে না।
নামগুলিকে লিঙ্গ, রাজনীতি, ধর্ম এবং সংস্কৃতি নিরপেক্ষ হতে হবে।
ছোট এবং সহজে উচ্চারণ করা যায়, এমন নাম বাছা উচিত।
নামগুলি যেন কোনও ভাবেই কারওর ভাবাবেগকে আঘাত না করে।
কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির নামের অনুকরণে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়/ হারিকেন ঝড়ের নাম দেওয়া যাবে না।