আসলে কিন্তু শব্দটা 'ন্যাড়া' নয়, শব্দটা 'মেড়া'। মেড়া শব্দের অর্থ ভেড়া বা মেষ। পুরাণ মতে, দোলের আগে চাঁচড় দহনে যে খড়-কাঠের ঘর বা কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়, তা আসলে মেষরূপী ভাদ্রপদা নক্ষত্রের প্রতিরূপ। শাস্ত্রমতে, এই উৎসব আসলে অসুর হিসাবে কল্পিত মেষ বা ছাগলকে পোড়ানোর উৎসব। যার নাশ হওয়ার পরেই সূর্যের উত্তরায়ণ শুরু হয়। শীতের পেরনোর পরে বাড়ে সূর্যের তাপ। দিন বড় হয়। দোলে লাল আবিরের ব্যবহার সূর্যেরই সমার্থক।
অমরত্বের বরলাভ করার পর থেকে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন হিরণ্যকশিপু। প্রজাদের উপরে তাঁর অত্যাচার আরও বাড়তে শুরু করে। তবে হিরণ্যকশিপুর নিজের ছেলে প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণুর একনিষ্ঠ ভক্ত। একসময় রাগে নিজের ছেলেকেই হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন হিরণ্যকশিপু। আর এই কাজে হিরণ্যকশিপুকে সাহায্য় করতে এগিয়ে আসেন তাঁর নিজের বোন হোলিকা।
হোলিকাও ব্রহ্মার বরপ্রাপ্ত ছিলেন। হোলিকা ব্রহ্মার কাছ থেকে একটি শাল পেয়েছিলেন। ব্রহ্মা জানিয়েছিলেন, এই শাল তাঁকে সবসময় রক্ষা করবে। হোলিকা বলেন, তিনি প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনের মধ্যে বসবেন। শাল থাকায় তাঁর কিছু হবে না। কিন্তু প্রহ্লাদ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। কিন্তু, যেই প্রহ্লাদকে নিয়ে হোলিকা আগুনে প্রবেশ করেন, তখনই তাঁর গায়ের শালটি প্রহ্লাদের গায়ে চলে যায়। ফলে প্রহ্লাদের কিছু না হলেও পুড়ে ছাই হয়ে যান হোলিকা।
অনেক পুরাণ-বিশেষজ্ঞ আবার এর পিছনে শ্রীকৃষ্ণের মেষাসুর-বধের কাহিনি রয়েছে বলে মনে করেন। বলা হয়, সত্যযুগে রঘু নামে এক ধার্মিক রাজা ছিলেন। ঢুণ্ঢা নামে এক রাক্ষসীর উপদ্রব শুরু হয় তাঁর রাজ্যে। তা থেকে মুক্তি পেতে পুরোহিত বলেন, ঢুণ্ঢা তপস্যা করে শিবের বর পেয়েছে। শুধু ঋতু পরিবর্তনের সময় অল্পবয়সি ছেলেদের হাতে এই রাক্ষসীর বিপদ হতে পারে। ঢাক-ঢোল বাজিয়ে একে পুড়িয়ে মারতে হবে। এখান থেকেই নাকি এসেছে চাঁচড়পোড়া, মেড়া পোড়া বা বাঙালির ন্যাড়াপোড়ার আচার।