

মজার কথা কী জানেন, এই যে প্রতি বছর ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব গোলাপ দিবস পালিত হয়, তার সঙ্গে আদতে গোলাপ ফুলের সে রকম কোনও যোগাযোগ কিন্তু নেই। আসলে এই দিনটি উৎসর্গ করা হয়েছে মেলিন্ডা রোজের স্মৃতিতে। কানাডাবাসী মেলিন্ডার ক্যানসার রোগ ধরা পড়ে মাত্র ১২ বছর বয়সে। আস্কিন টিউমারের মতো বিরল রোগে আক্রান্ত মেলিন্ডাকে জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। photo source collected


হাতে আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ। আর তার পরেই মেলিন্ডা পাড়ি দেবে অজানার উদ্দেশে। জানা যায়, মেলিন্ডা ছ’মাস বেঁচেছিল। যে হেতু হাতে সময় বড্ড কম, তাই এক মুহূর্তও নষ্ট করেনি সে। অন্যান্য ক্যানসার রোগীদের উদ্দেশে কবিতা লিখে, মেল করে তাঁদের জীবন ভরিয়ে দিয়েছে ভালবাসা আর আনন্দে।photo source collected


এই আনন্দধারা ছড়িয়ে পড়েছিল অন্যান্য ক্যানসার রোগীদের মধ্যেও। অবাক হয়েছিল বিশ্বও- মৃত্যুর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও একটা মেয়ে কী ভাবে এত প্রাণবন্ত থাকতে পারে? আর সেই জন্যই ২২ সেপ্টেম্বর এই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে বিশ্ব গোলাপ দিবস বা ওয়ার্ল্ড রোজ ডে পালন করার জন্য। আজকের দিনে রোগ নিয়ে নয়, আলোচনা হয় রোগমুক্তি নিয়ে। উৎসাহ দেওয়া হয় রোগীদের; তাঁর আত্মীয়-পরিজন ও যাঁরা রোগীর সেবা করেন তাঁদেরও। তার সঙ্গেই ক্যানসার বিষয়ে কিছু সচেতনতারও প্রচার করা হয়। তাড়াতাড়ি ধরা পড়লে এই রোগ যে সেরেও যায়- সেই বিষয়েও আশ্বাস দেওয়া হয়।photo source collected


তা ছাড়া, যুগ যুগ ধরে ভালবাসার প্রতীক হিসেবে গোলাপ ফুলের জনপ্রিয়তা বরাবরই ছিল। আজকের দিনে ক্যানসার রোগীদের গোলাপের তোড়া দেওয়া হয়। যে কঠিন লড়াই তাঁরা লড়ছেন, প্রতি দিন আলোয় ফেরার যে অদম্য চেষ্টা তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন, তার উদযাপনের জন্যই এই ফুল দেওয়া হয়। প্রতিটা ফুল রোগীকে বুঝিয়ে দেয় ভালবাসার অমোঘ শক্তির কথা। এই কঠিন সময়ে বন্ধু ও আত্মীয়রা যে রোগীর পাশে আছেন, তাঁরা যে রোগীকে অন্তর দিয়ে ভালবাসেন, সেই কথাই যেন এই ফুলগুলো নীরবে বলে।photo source collected


কিন্তু গোলাপ-ই বা কেন? যে কোনও ফুলই তো সুন্দর। আসলে গোলাপের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা কিংবদন্তী, জড়িয়ে আছে অনেক কাহিনি। খ্রিস্ট ধর্মে গোলাপকে বলা হয় স্বর্গের ফুল। যা ইডেন বা ভগবানের বাগানে ফোটে। ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন এই ফুলের পবিত্র সুবাসে ইশ্বর স্বয়ং এসে ধরা দেন।photo source collected


প্রাচীনকালে রোমানরা আবার বিশ্বাস করত যে গোলাপ হচ্ছে সৌন্দর্যের প্রতীক। কারণ ভালবাসার দেবী ভেনাসের পছন্দের ফুল এই গোলাপ। পুনর্জন্মে বিশ্বাসী রোমানরা তাই মৃত্যুর পরে প্রিয়জনের কবরে পুঁতে দেন গোলাপের চারা। মনে করা হয়, একদিন মৃত্যুকে অতিক্রম করে জীবনের সৌন্দর্যকে আবার উপভোগ করতে ফিরে আসবেন সেই প্রিয়জন।photo source collected


তেমনই ইসলাম ধর্মে গোলাপ হল আত্মার প্রতীক, আর এর সুবাস যেন সেই আত্মার পবিত্রতাকে বোঝায়।photo source collected


আমাদের দেশেও অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের শীতল ও সতেজ রাখতে গোলাপ জলের ছিটে দেওয়া হয়। হারবার্ট আর্ট মিউজিয়াম যদিও বলছে যে ভারতে এই প্রথা মুঘলদের হাত ধরে এসেছে। মুঘলরা এসেছিলেন ইরান থেকে। যেখানে পালিত হত অব-পাশান উৎসব। এই উৎসবে বৃষ্টির অনুভূতি দেওয়ার জন্য এবং খরাকে অতিক্রম করার জন্য গোলাপ জলের ছিটে দেওয়া হত। মুঘলদের হাত ধরে এই প্রথা ভারতে আসার পর তা গ্রহণ করে নেন রাজপুতরাও। গ্রীষ্মের প্রখর দাহ আর জ্বালা মেটাতে গোলাপ জলের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তাঁদের মধ্যে।photo source collected