

সারাক্ষণ কাজে ব্যস্ত। কাজে ডুবে থেকেই দিন কাটছে। তা হলে আগেভাগেই সাবধান হতে হবে। কারণ ওয়ার্কাহোলিকদের ক্ষেত্রে মানসিক অবসাদ, উদ্বেগের পাশাপাশি একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। সম্প্রতি এমনই তথ্য তুলে ধরেছে এক সমীক্ষা। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেল্থে প্রকাশিত এই সমীক্ষার দাবি, যাঁদের ওয়ার্ক অ্যাডিকশন বেশি, তাঁরাই নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগেন।


সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা জানাচ্ছেন, ওয়ার্কাহোলিক বলতে সাধারণ অর্থে সেই কর্মীদের বোঝানো হয়েছে, যাঁরা প্রতি সপ্তাহে অন্যদের তুলনায় সাত ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করে থাকেন। এক্ষেত্রে ওয়ার্ক অ্যাডিকশন, জব কন্ট্রোল-সহ একাধিক প্যারামিটার খতিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। আর এই সূত্রেই উঠে এসেছে কারসেকের (Karasek) জব ডিমান্ড- কন্ট্রোল-সাপোর্ট মডেল বা JDCS মডেল।


এই JDCS মডেলে চার ধরনের আলাদা ওয়ার্ক এনভায়রনমেন্টের বিষয়কে তুলে ধরা হয়। এর সঙ্গেই যুক্ত ভিন্ন ধরনের জব ডিমান্ড ও জব কন্ট্রোলের বিষয়টি। এগুলি হল প্যাসিভ (Passive), লো স্ট্রেইন (Low Strain), অ্যাক্টিভ (Active), টেনস/ জব স্ট্রেইন (Tense/Job Strain)। উল্লেখ্য, জব কন্ট্রোল হল সেই পরিস্থিতি যেখানে একজন কর্মী তাঁর কাজের উপরে কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে উপলব্ধি করতে পারেন।


বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ১,৫৮০ জন ফরাসি কর্মীর মধ্যে ১৮৭ জনের (১১.৮ শতাংশ) থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা। এর পর কাজের ধরন, কাজের চাপ, সব সময়েই কাজ করার প্রবণতা, ওয়ার্ক অ্যাডিকশন রিস্ক-সহ একাধিক বিষয়ের ভিত্তিতে এই কর্মীদের আলাদা আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা হয়। সারাক্ষণ কাজের প্রবণতা শরীরের উপের কী প্রভাব ফেলছে, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হয়।


ফলাফল বেশ চমকপ্রদ ছিল। সমীক্ষা ও দীর্ঘ গবেষণা শেষে দেখা যায়, ওয়ার্ক অ্যাডিকশন রিস্কের সঙ্গে দৃঢ় ভাবে যুক্ত কাজের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান চাহিদা অর্থাৎ হাই জব ডিমান্ড। তবে জব কন্ট্রোলের বিষয়টি এখানে সমান সক্রিয় ভাবে ভূমিকা নেয় না। JDCS মডেল অনুযায়ী, প্যাসিভ ও লো স্ট্রেইন কর্মীদের থেকে অ্যাক্টিভ ও হাই স্ট্রেইন কর্মীদের ক্ষেত্রে ওয়ার্ক অ্যাডিকশন রিস্কের প্রবণতা অনেক বেশি। স্বভাবতই, যাঁরা ওয়ার্কাহোলিক, তাঁদের ক্ষেত্রে একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনাও বেশি


একই বক্তব্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে রাশিয়ার হায়ার স্কুল অফ ইকোনমিকসের গবেষক মোরতেজা চারখাবির কথায়। তিনি জানিয়েছেন, যাঁদের ওয়ার্ক অ্যাডিকশন বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব দেখা যায়। এক্ষেত্রে পুরুষের থেকে মহিলাদের আরও বেশি ক্ষতি হতে পারে। এর পিছনে সব চেয়ে বড় কারণ হল জব ডিমান্ড। তাই বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। না হলে বড়সড় বিপদ হতে পারে।