

করোনার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হৃদযন্ত্র। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে ও হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে, এমন অর্ধেকেরও বেশি মানুষের নতুন করে হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা দিয়েছে, বলছে ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা। তার কারণ হিসেবে ট্রপোনিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন গবেষকরা।


হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত ওই রোগীদের MRI বা ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং করে দেখা গিয়েছে, হৃদযন্ত্রের পেশিতে সমস্যা (Myocarditis), টিস্যু নষ্ট হয়ে যাওয়া বা মৃত টিস্যুর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া (Infraction), হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচলে বাধা (Ischeamia)- এই তিন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। কারও এই তিনটির একটি বা দু'টি, আবার কারও শরীরে এই তিনটি সমস্যাই একসঙ্গে দেখা গিয়েছে।


সমীক্ষাটির জন্য লন্ডনের ছ'টি হাসপাতালের ১৪৮ জনকে নির্দিষ্ট করা হয়, যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়েছিল। পাশাপাশি তাঁদের হৃদযন্ত্রেও হালকা সমস্যা ছিল। পরে তাঁদের MRI করে দেখা যায়, সামান্য নয় বেশিরভাগ রোগীরই হৃদযন্ত্রে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে।


পরীক্ষায় দেখা যায়, ট্রপোনিনের মাত্রা বেড়েছে এই সমস্ত রোগীর রক্তে। এখন গবেষকরা বলছেন, হৃদযন্ত্র কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেই কিন্তু এই ট্রপোনিনের মাত্রা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে কোনও ধমনী আটকে গেলে সেখানে এই ট্রপোনিন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ও জ্বালাভাব শুরু হয়।


এই বিষয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক মারিয়ানা ফনটানা বলেন, করোনার সঙ্গে এই ট্রপোনিন বেড়ে যাওয়ার একটা যোগসূত্র দেখা যাচ্ছে। যেটা করোনার অন্যতম খারাপ দিক। অনেক সময়ে করোনা হয়েছে এমন অনেকেরই আগে থেকে হৃদযন্ত্রে সমস্যা বা অন্যান্য কোমর্বিডিটি থাকে। তবে, এক্ষেত্রে কিছু না থাকলেও এই ট্রপোনিন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা নতুন করে দেখা গিয়েছে।


এই অধ্যাপক ও এই সমীক্ষার গবেষক ফনটানা আরও বলেন, করোনার জন্য যদিও হৃদযন্ত্র সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিন্তু আগে এটা বলা মুশকিল ছিল কতটা ও কী ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে, MRI করার ফলে পুরোটা আঁচ করা যাচ্ছে ও বোঝা যাচ্ছে কতটা প্রভাব এই ভাইরাস আমাদের হৃদযন্ত্রে ফেলেছে।


এই গবেষণায় প্রথম থেকেই অনেকের মধ্যে অদ্ভুত মাত্রায় ট্রপোনিন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এবং এর সঙ্গেই দেখা যায়, যাঁরা করোনার কাটিয়ে বাড়ি ফিরেছেন, কিছু দিন সুস্থ থেকেছেন, কিন্তু আবারও এই ট্রপোনিনের মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় ও হৃদযন্ত্রে সমস্যা হওয়ায় হাসপাতালে ফেরত গিয়েছেন।


এই বিষয়ে ফনটানা আরও বলেন, এক-দু'মাসে ছাড়া পেয়েছেন এমন অনেকের শরীরেই এই সমস্যা দেখা গিয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা করার পর বোঝা গিয়েছে, আমরা যে তিনটি সমস্যার কথা তুলে ধরেছি, তা ছাড়াও অনেক সমস্যা রয়েছে। তাই যাঁদের করোনা হয়েছে ও হৃদযন্ত্রে কোনও রকম সমস্যা দেখা যাচ্ছে, তাঁদের অবশ্যই শারীরিক পরীক্ষা করানো উচিৎ, বিশেষ করে হৃদযন্ত্রের!