মহাসমারোহে হাজির হয়েছে গ্রীষ্ম ঋতু। আর গরমের তীব্র রক্তচক্ষুর মধ্যে ফলের রাজা আমই যেন মরুভূমির মাঝে এক টুকরো স্বর্গোদ্যান! আসলে আম পছন্দ করেন না, এমন মানুষ বোধহয় গোটা পৃথিবীতে নেই। গরমের দিনে পেট এবং মন ভরাতে পাতে একটা পাকা আমই যথেষ্ট। এছাড়া পাকা আমের লস্যি, মিল্ক শেক, আইসক্রিম তো আছেই। তবে শুধু পাকা নয়, কাঁচা আমও গরমের দিনে দারুণ। শরীর ঠান্ডা রাখতে কাঁচা আম অথবা আম পোড়ার শরবতের জুড়ি মেলা ভার। আর গরমের দিনে কাঁচা আমের ডাল অথবা চাটনি তো মাস্ট! Representative Image
কিন্তু বাজার থেকে কিনে এনেই সরাসরি আম খাওয়া হয় না। কমবেশি সকলেই বোধহয় জানেন যে, আম কেটে খাওয়ার আগে সেই আম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়। প্রাচীনকাল থেকে এই ঘরোয়া টোটকা অবলম্বন করে আসছেন ঠাকুমা-দিদিমারা। কিন্তু মনে কি কখনও প্রশ্ন জাগে যে, খাওয়ার আগে আম কেন ভিজিয়ে রাখা হচ্ছে? অনেকেই মনে করেন, ধুলো-ময়লা অথবা রাসায়নিক মুক্ত করার জন্যই হয়তো আম কাটার আগে ওভাবে ভিজিয়ে রাখা হচ্ছে। আসলে শুধু এটাই একমাত্র কারণ নয়, এর সঙ্গে রয়েছে আরও নানা কারণ। দেখে নেওয়া যাক, সেই সব কারণ!
ফাইটিক অ্যাসিড থেকে মুক্তি:ফাইটিক অ্যাসিড (Phytic Acid) হল এমন একটি নিউট্রিয়েন্ট, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো আবার খারাপও। অনেক সময় এই উপাদানকে অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্ট (Anti-nutrient) হিসেবেও গণ্য করা হয়ে থাকে। কারণ দেহে আয়রন, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম-সহ অন্যান্য মিনারেল শোষণ করার ক্ষমতা রুখে দিতে পারে এই ফাইটিক অ্যাসিড। আর এর কারণেই শরীরে মিনারেলের ঘাটতিজনিত সমস্যা সৃষ্টি হয়। পুষ্টিবিদদের মতে, আমে রয়েছে ফাইটিক অ্যাসিড। শুধু আমেই নয়, বিভিন্ন ফল, সবজি এবং বাদামেও থাকে এই উপাদান। আর আমকে ফাইটিক অ্যাসিড মুক্ত করতে খাওয়ার আগে কয়েক ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখা হয়। এতে আমের অতিরিক্ত ফাইটিক অ্যাসিড দূর হয়। আমের অতিরিক্ত ফাইটিক অ্যাসিড শরীর অতিরিক্ত তাপ উৎপাদন করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
রোগব্যাধি এড়াতে: খাওয়ার আগে আম ভিজিয়ে রাখলে ব্রন, স্কিন র্যাশ, ফোঁড়ার মতো সমস্যা এড়ানো যায়। এখানেই শেষ নয়, মাথা যন্ত্রণা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটের নানা সমস্যা দূর করতেও এই টোটকা দারুণ কাজে আসে। আসলে শরীর গরম করে দেয়, এমন উপাদান রয়েছে আমের মতো ফলে। আর শরীর গরম হলেই ডায়েরিয়া এবং ব্রণর মতো সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই ধরনের ফল খাওয়ার আগে জলে ভিজিয়ে রাখলে সেই সমস্যা দূর করা যায়।
রাসায়নিক দূরীকরণ: আমের ফলন ঠিকঠাক রাখতে এবং বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে আম চাষের সময় কীটনাশক এবং জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়। যা বেশ বিষাক্ত। এমনকী এই সব রাসায়নিক আমের সঙ্গে কোনও ভাবে শরীরে প্রবেশ করলে নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আর এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে অন্যতম অ্যালার্জি, শ্বাসনালীতে সমস্যা, মাথা ব্যথা, নাক এবং চোখে জ্বালা, বমি-বমি ভাব ইত্যাদি। আম জলে ভিজিয়ে রাখা হলে এর থেকে দুধের মতো কষ দূর হয়ে যায়।