

সে ভাবে দেখতে গেলে কোনও কারণ নেই! অথচ মাঝে মাঝে অপরাধী বলে মনে হচ্ছে নিজেকে! মনে হচ্ছে- কোথাও যেন কিছু একটা ঠিক নেই! সব কিছুর মধ্যে তাল কেটে যাচ্ছে বারে বারে!


মনোবিদরা বলছেন যে এ হেন মানসিক সমস্যার মধ্যে আমাদের অনেককেই ফেলেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। আমাদের স্বাস্থ্যের উপরে, স্পষ্ট ভাবে বললে মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব ফেলেছে বিশ্বের সামগ্রিক পরিস্থিতি। এই প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসেবে টেনে আনা যেতে পারে ইউনাইটেড স্টেটসের এক লেখিকা শ্রুতি রাওয়ের কথা। তিনি জানিয়েছেন যে মাঝে মধ্যেই তাঁর মনে জমা হচ্ছে তীব্র অপরাধবোধ। অথচ, তিনি কারও কোনও ক্ষতি করেননি! তা হলে?


শ্রুতির মতো ঠিক একই রকম অনুভূতির সম্মুখীন হচ্ছেন করোনাকালে অনেকেই। মনোবিদরা বলছেন যে একে বলা হয় সারভাইভর সিনড্রোম। অর্থাৎ যে পরিস্থিতি একটা বড় অংশের ক্ষেত্রে বিপর্যয় ডেকে এনেছে, সেটার মধ্যেই ভালো থাকা! বলা হয়, মনোবিদ্যায় এই থিওরি প্রবর্তন করেন ডক্টর উইলিয়াম জি নিয়েদারল্যান্ড। এই বিষয়ে তাঁর খণ্ডে খণ্ডে লেখা বইও আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তিনি নিজে নাৎজি অত্যাচার থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। যা পরে এই থিওরির জন্ম দেয়।


নানাবতী সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের মনোবিদ ডক্টর শর্মিলা বনওয়াটের মতে এই সারভাইভর সিনড্রোম গ্রাস করছে আমাদেরও। আমরা অনেকেই এই করোনাকালে পরিচিতদের মৃত্যুসংবাদ পেয়েছি, চোখের সামনে দেখছি কী অসহায় পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেশ তথা বিশ্ব। এই সবটাই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে।


পাশাপাশি, অনেক দিন ধরে বাড়িতে থাকতে থাকতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও মনোমালিন্য হচ্ছে। সেটাও কোনও এক দিক থেকে বাড়িয়ে তুলছে অপরাধবোধ। দেখা হচ্ছে না কাছের বন্ধুদের সঙ্গে, সেটাও অপরাধী করে তুলছে আমাদের।


কিন্তু মাথায় রাখতে হবে যে করোনাকালীন পরিস্থিতি আমাদের হাতে নেই। আমাদের হাতে শুধু রয়েছে নিজেদের ভালো রাখা যতটা সম্ভব। তাই মনোবিদরা বলছেন- মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। এই লক্ষ্যে নিয়মিত ধ্যান করা যেতে পারে। একটা সুন্দর কোনও মিউজিক চালিয়ে চুপচাপ নিজের মতো একটু সময় কাটালেও উপকার হবে। তাতেই মন শান্ত থাকবে, ফিরবে জীবনযাপনে আনন্দ এবং আস্থা।