গভীর ঘুম ঠিক করতে পারে স্নায়ুর সমস্যা, ভালোবেসে ঘুমোতে দিন!
স্নায়ুঘটিত রোগের বিস্তৃতি ও জটিলতা সম্পর্কে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকে না। তাই কখন সচেতন হতে হবে, তা আমরা বুঝতেও পারি না। এ দিকে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ সময় পেরিয়ে যায়।


সর্দি-কাশি-হাঁচি হলে আপনি বুঝতে পারেন জ্বর আসতে পারে। কখনও আবার তা অন্য রোগের উপসর্গও বটে। এই দুইয়ের বিভাজন সম্পর্কে সম্যক ধারণা আছে বলে আপনি যথাসময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। কিন্তু স্নায়ুঘটিত রোগের বিস্তৃতি ও জটিলতা সম্পর্কে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকে না। তাই কখন সচেতন হতে হবে, তা আমরা বুঝতেও পারি না। এ দিকে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ সময় পেরিয়ে যায়।


সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, স্নায়ুরোগের নানা জটিল সমস্যার সমাধান হতে পারে শুধু ভালো করে ঘুমিয়েই। তবে মাথায় রাখতে হবে, বয়সভেদে স্নায়ুঘটিত সমস্যার উপসর্গ নির্ধারণ করতে হবে। চল্লিশের নীচে বলে মাথাব্যথা, এপিলেপ্সি, স্ট্রোক। এই বয়সে সাধারণত স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা অন্য রোগের তুলনায় কম হলেও, গত কয়েক বছরে ভারতে এই সংখ্যা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। চল্লিশের উপরে কিন্তু ষাটের নীচে হলে এপিলেপ্সি, স্ট্রোক, কোমরের নীচের দিকে ব্যথা, মাথাব্যথা। ষাটের ঊর্ধ্বে হলে স্ট্রোক, ডিমেনশিয়া, মস্তিষ্কে সংক্রমণ। যদি এপিলেপ্সির সমস্যা জিনগত কারণে হয়, তার প্রকাশ ১৮-২০ বছর বয়সেও হতে পারে।


এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যার আজ অবধি মাথাব্যথা হয়নি। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাথাব্যথার তীব্রতা ও কত দিন অন্তর হচ্ছে, তার উপরে নজর রাখতে হবে। এর সঙ্গে বমি, জ্বর, দেখার সমস্যা, ডাবল ভিশন বা ব্ল্যাক আউটের মতো উপসর্গ যদি দেখা যায়, বুঝতে হবে সমস্যাটি গুরুতর ও স্নায়ুজনিত। তখনই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এবং ঘুমেই হতে পারে এর বাজিমাত। তার সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ তো খেতেই হবে। অনেক সময়ই কিন্তু ঘুমের অভাবেও মাথাব্যথা করে। সেটিকে ভুললে চলবে না।


সাধারণ ভাষায় 'খিঁচুনি' বলা হয় এপিলেপ্সিকে। এর রকমফেরও আছে। কিন্তু এমন কিছু এপিলেপ্সিও রয়েছে, যা সাধারণ মানুষ চিনতেই পারেন না। টেম্পোরাল লোব এপিলেপ্সির ক্ষেত্রে রোগী কথা বলতে বলতে আনমনা হয়ে যান। রোগীর বাড়ির লোক বলেন, তখন রোগী অদ্ভুত কিছু মুখভঙ্গিমা বা হাতের মুভমেন্ট করেন। রোগীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি হয়তো বলেন, ওই সময়ে তিনি কোনও অপরিচিত গন্ধ পান বা কোনও অবয়বের বিকৃতি দেখতে পান বা কোনও মন্ত্র শুনতে পান। হ্যালুসিনেশন শুনলেই আমাদের মনে হয়, রোগটি হয়তো মানসিক। সাইকায়াট্রিস্টের শরণাপন্ন হই আমরা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সমস্যাটি স্নায়বিক।


স্মার্ট ফোনের ক্রমাগত ব্যবহার ও হ্যান্ড মুভমেন্টের কারণে কবজির নার্ভ অনেক ক্ষেত্রেই সংকুচিত হয়ে যায়। স্পাইনাল কর্ডের সমস্যাও হতে পারে। ফলে ঘুমের সময় অন্তত মোবাইলের ব্যবহার একেবারে বন্ধ করুন। ঘুমোনোর অন্তত আধ ঘণ্টা আগে থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ সরিয়ে রাখুন। এতে ঘুমও ভালো হবে।


নার্ভের সমস্যা অভ্যন্তরীণ। তাই এ ক্ষেত্রে অনেক সময়েই রোগ চিনতে পারেন না রোগী। তাই যে কোনও উপসর্গ সম্পর্কে সজাগ হোন ও ঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিন। এবং এর সঙ্গে মাথায় রাখুন, স্নায়ুর অনেক জটিল রোগও শুধু গভীর ঘুমের অভাবেই হয়। এক্ষেত্রে নিজের ঘুমের ধরন বুঝে নিজেকে সময় দিন, ভালো করে ঘুমোনোর চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ভালোবেসে ঘুমোন, ঘুমোতে দিন।