

বিজেপি-তে যোগ দিয়েই রাজ্যে পরিবর্তনের পরিবর্তন করার ডাক দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী৷ অনেক দিন ধরেই একই আওয়াজ তুলেছেন বিজেপি নেতারা৷ আর যত বিধানসভা নির্বাচন এগিয়ে আসছে, ততই যেন রাজ্যে ফের চর্চায় উঠে আসছে সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রাম৷


২০১১ সালে পরিবর্তনের স্লোগান তুলে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেই সময় তৃণমূলের মূল অস্ত্র ছিল সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামের আন্দোলন৷ গোটা দেশের নজর কেড়ে নিয়েছিল বাম সরকারের বিরুদ্ধে জমি আন্দোলন৷ দশ বছর পর সেই নন্দীগ্রাম এবং সিঙ্গুরই ফের চর্চায়৷ তবে এবার যেন কিছুটা হলেও তা রাজ্যের শাসক দলের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷


২০০৭ সালের পরবর্তী সময়ে প্রতিটি নির্বাচনেই বিশেষ নজরে থাকত সিঙ্গুর- নন্দীগ্রাম৷ ২০১১ সালের পর অবশ্য এই দুই জায়গাতেই নির্বাচনের ফল অনেকটা প্রত্যাশিত ছিল৷ কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপি-র উত্থান, শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপি-তে যোগদানের পর আগামী বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম এবং সিঙ্গুরের লড়াই নিশ্চিতভাবে অন্যমাত্রা পেতে চলেছে৷


নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম মুখ শুভেন্দু অধিকারীই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন৷ তিনি নন্দীগ্রামের বিধায়কও ছিলেন তিনি৷ ফলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর সঙ্গে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের কার্যত প্রেস্টিজ ফাইট হতে চলেছে৷ ইতিমধ্যেই নন্দীগ্রাম থেকে লড়ার জন্য শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জও জানিয়ে রেখেছে তৃণমূল৷ আগামী ৭ জানুয়ারি নন্দীগ্রামে সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ঠিক তার পরের দিন নন্দীগ্রামে সভা করার কথা ঘোষণা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী৷


নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কৃতিত্ব কার, তাই নিয়েই এখন শুভেন্দুর সঙ্গে কথার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছেন তৃণমূল নেতারা৷ একদিকে শুভেন্দু দাবি করছেন নন্দীগ্রাম আন্দোলন কারও ব্যক্তিগত সাফল্য ছিল না, তা ছিল মানুষের আন্দোলন৷ অন্যদিকে, শাসক দলের নেতারা দাবি করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই নন্দীগ্রাম আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল, তা জাতীয় স্তরেও চর্চার বিষয় হয়ে গিয়েছিল৷ শুভেন্দুকে ছাড়াই নন্দীগ্রামে আধিপত্য বজায় রাখাটাই এখন তৃণমূলের কাছে চ্যালেঞ্জ৷


অন্যদিকে নন্দীগ্রামের মতো না হলেও বৃহস্পতিবারের পর ফের একবার চর্চায় উঠে এসেছে সিঙ্গুরও৷ সেখানে সিঙ্গুরে ১১ একর জমিতে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তুলবে রাজ্য সরকার৷ একই সঙ্গে ফের একবার সিঙ্গুরে বড় শিল্প হওয়ার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অনেকেরই ধারণা, সিঙ্গুরের মন পেতেই ভোটের আগে নয়া প্রকল্প ঘোষণা করল রাজ্য সরকার৷ কারণ গত লোকসভা নির্বাচনেই সিঙ্গুর বিধানসভায় প্রায় দশ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি৷


সিঙ্গুরে শিল্প প্রতিষ্ঠাও যেমন রাজ্য সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জ, সেরকমই নন্দীগ্রামে হারানো জমি পুনরুদ্ধার করাও শাসক দলের কাছে কঠিন পরীক্ষা হতে চলেছে৷ মুখে শাসক দলের নেতারা বলছেন, সিঙ্গুর- নন্দীগ্রামের মানুষ তাঁদের সঙ্গই রয়েছেন৷ ফলে, বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রাম৷