যদিও ভারতের মৌসম ভবন নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার আগে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ সম্পর্কে কোনও তথ্য দিতে নারাজ। ইউরোপ ও আমেরিকার দুটো মডেলই মোটামুটি ভাবে নিশ্চিত যে মধ্য বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে বাংলাদেশ ও মায়ানমার সংলগ্ন উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে মায়ানমারের রায়খান এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে এটি স্থলভাগে ঢুকতে পারে। প্রাথমিকভাবে উত্তরমুখী হয়ে এই ঘূর্ণিঝড় মধ্য বঙ্গোপসাগরের দিকে এগোতে পারে। এরপর এটি গতিপথ পরিবর্তন করবে। Photo Courtesy: Windy.com
ঘূর্ণাবর্ত ঘনীভূত হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে। আজ, সোমবার ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হবে। নিম্নচাপ দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিণ আন্দামান সাগরে আরও ঘনীভূত হবে মঙ্গলবার ৯ মে। পরিণত হবে গভীর থেকে অতি গভীর নিম্নচাপে। সেই সময় এর অবস্থান হবে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর আন্দামান সাগর। গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে এই সিস্টেম মধ্য বঙ্গোপসাগরের দিকে এগোবে। সেই সময় এর গতিমুখ থাকবে উত্তর অভিমুখে।
যদিও বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মডেল ভিন্ন ভিন্ন মত দিচ্ছে নিম্নচাপ তৈরি থেকে ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ এবং ল্যান্ডফল নিয়ে। ভারতের মৌসম ভবনের সঙ্গে একমত আন্তর্জাতিক গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম বা জিএফএস জানাচ্ছে আজ ৮ মে নিম্নচাপে পরিণত হবে সিস্টেমটি। যদিও আরও দুটি মডেল বিশেষ করে ইউরোপিয়ান মডেল জানাচ্ছে ১০ মে বুধবার নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। মধ্য বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড় দিক পরিবর্তন করবে। এটা সুনিশ্চিত হলেও বিভিন্ন মডেল বিভিন্ন দিকে তার গতিপথ সুনির্দিষ্ট করছে।
প্রাথমিকভাবে এটি বিশাখাপত্তনমের দিকে বা অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের দিকে কিছুটা এগোলেও তারপর বঙ্গোপসাগরের মধ্যেই আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে এগোতে থাকবে। ক্রমশ এর সঙ্গে দূরত্ব কমবে ভুবনেশ্বর ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের। এরপর উত্তর-পূর্ব দিকে এর অভিমুখ হয়ে এটি আরও শক্তিশালী হবে। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় থেকে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এর অভিমুখ দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ অথবা মায়ানমার উপকূল হতে পারে বলে আন্তর্জাতিক মডেল জানাচ্ছে।
অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই এটি উপকূলে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এনসিইউএম মডেল যেটি ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের যৌথ মডেল ৷ এটি নিউমেরিক্যাল ওয়েদার প্রেডিকশন বা এনডব্লিউপি অনুযায়ী তাদের পূর্বাভাস নির্ধারিত করে। এই মডেল অনুযায়ী দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া সিস্টেমকে খুব বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন না। অন্য মডেলের থেকে একেবারে ভিন্ন মত দিচ্ছে এই মডেল।
এই মডেল অনুযায়ী দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর থেকেই এটি পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। অর্থাৎ একেবারে তামিলনাডু উপকূলের দিকে। এরপর সমুদ্রের মধ্যেই এটি দিক পরিবর্তন করে দক্ষিণ-পূর্ব আরব সাগরে গিয়ে মিলিয়ে যাবে। যদিও আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন যে মে মাসে সাধারণত পূর্ব উপকূল এবং বাংলাদেশ ও মায়ানমার উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের আছড়ে পড়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে।
ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এই সিস্টেমের নাম হবে ‘মোকা’। আরব সাগরের দেশ ইয়েমেনের দেওয়া নাম মোকা। মোকার প্রভাবে পর্যটকদের জন্য সতর্কতা জারি আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সমুদ্র ও তার তীরবর্তী সমস্ত বিনোদনমূলক কাজকর্ম বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ে মৎস্যজীবীদের জন্য সতর্কবার্তা এবং পর্যটকদের ভেসেল না চালানোর পরামর্শ আবহাওয়া দফতরের।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকবে। নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। ভারী বৃষ্টির সতর্কতা থাকবে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জেও। মঙ্গলবার পর্যন্ত তুমুল বৃষ্টি হতে পারে এই দুই দ্বীপপুঞ্জ এলাকায়। বুধ ও বৃহস্পতিবার প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। বৃষ্টির সঙ্গে তুমুল হাওয়া বইবে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। আজ, সোমবার সেই ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে বলে অনুমান আবহাওয়াবিদদের।
বুধ ও বৃহস্পতিবারে ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত এই ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে বলে অনুমান আবহাওয়াবিদদের। মৎস্যজীবীদের জন্য সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সংলগ্ন সমুদ্রে সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। অর্থাৎ ৮ মে থেকে ১২ মে পর্যন্ত সমুদ্রে যেতে মানা মৎস্যজীবীদের। যারা সমুদ্রে রয়েছেন তাদের রবিবার বিকেলের মধ্যে উপকূলে ফিরে আসতে পরামর্শ আবহাওয়াবিদদের।
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকা উত্তাল থাকবে। শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই সমুদ্র এলাকাতেও মৎস্যজীবীদের প্রবেশ নিষেধ বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন। ওই সময় সমুদ্রের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইবে। যার ফলে সমুদ্র উত্তাল থাকবে ৷ এই কারণে মৎস্যজীবীদের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে নিষেধাজ্ঞা জারি করল আবহাওয়া দফতর।