

ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতের অন্যতম ধারক পন্ডিত যশরাজ প্রয়াত৷ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঐতিহ্যবাহী ঘরানাকে তিনি বিশ্বের দরবারে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন৷ স্টেজ পারফর্ম্যান্সের পাশাপাশি বয়সকালে স্কাইপে ছাত্র-ছাত্রীদের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিমও দিতেন তিনি৷


বলিউডে হাতে গোনা কয়েকটি গান গেয়েছেন পন্ডিত যশরাজ৷ সেই গানগুলি আজও অবস্মরণীয়৷ তাঁর মুগ্ধ করে দেওয়া স্বর এক আধ্যাত্মিক পরিবেশ সৃষ্টি করে৷ ১৯৬৬ সালে বলিউডে তিনি গেয়েছিলেন 'লড়কি সাহিয়াদ্রি কি' ছবিতে৷ ২০০৮ সালে বিরবল মাই ব্রাদার ছবিতে পন্ডিত ভীমসেন যোশির সঙ্গে যুগলবন্দিতে গেয়েছিলেন ভজন৷


শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম নক্ষত্র পন্ডিত যশরাজ একবার তাঁর জীবনের প্রথম স্টেজ কনসার্টের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে৷ সে দিন নেপালের রাজা তাঁর গানে মুগ্ধ হয়ে ৫ হাজার স্বর্ণ মুদ্রা উপহার দিয়েছিলেন৷ যশরাজের কথায়, 'আমার তো প্রায় অজ্ঞান হওয়ার জোগাড়৷'


১৯৫২ সালের ঘটনা৷ তখন নেপালের রাজা ত্রিভূবন বীর বিক্রম শাহ৷ পন্ডিত যশরাজের কথায়, 'আমার জীবনের প্রথম কনসার্ট৷ কনসার্ট শেষে রাজা তাঁর লোকদের দিয়ে ঘোষণা করলেন, তিনি আমাকে ৫ হাজার স্বর্ণমুদ্রা পুরস্কার দিচ্ছেন৷ আমি স্তম্ভিত৷ বিশ্বাস হচ্ছিল না৷ ঘামছিলাম, প্রায় মুর্ছা যাই আর কী! তখন আমার বয়স হয়তো ২২ বছর৷'


পন্ডিত যশরাজের বড় নাতনি শ্রদ্ধা পন্ডিত ও শ্বেতা পন্ডিতও যশরাজের কাছে তালিম নিয়ে বর্তমানে বিখ্যাত গাইয়ে৷ পণ্ডিত যশরাজের প্রিয় গায়িকা ছিলেন লতা মঙ্গেশকর৷ একবার এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, 'আমি ওয়েস্টার্ন মিউজিক, আফ্রিকান মিউজিক বা সিনেমার গানও শুনি৷ আমার সব সময়ের প্রিয় লতা মঙ্গেশকর, ওঁর মতো কেউ নেই৷ আমি ওঁকে মাঝে মাঝে বলি৷ আমি সিনেমা দেখি৷ আমার নাতনি যখনই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কোনও সিনেমা চালায়, দেখি৷'


পন্ডিত যশরাজ বরাবর বলে এসেছেন, পশ্চিমি সঙ্গীতের থেকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত কোনও অংশে কম যায় না৷ তিনি বলতেন, 'পশ্চিমি সঙ্গীত অনেক্ষণ শুনলে আপনার হয়তো একঘেঁয়ে লাগতে পারে৷ কিন্তু ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শুনলে, আপনি শান্ত হয়ে যাবেন৷ অপার শান্তিতে শুনবেন৷ অন্য যে কোনও মিউজিকে আপনার শরীর, মন সব কিছু নড়বে৷ কিন্তু ভারতীয় মার্গ সঙ্গীত আপনাকে শান্ত রাখবে৷'