

• রেখা । দেশের বিনোদন জগতে অসম্ভব ব্যক্তিত্বময়ী, বিতর্কিত, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা আবেদনময়ী এক নাম । যে নামের সঙ্গে আজও জড়িয়ে রয়েছে বহু রহস্য, বহু অচানা-গোপন গল্প, বহু তর্জা । সিনেমার জগত থেকে বিদায় নেওয়ার পরেও ওই একটা নামে আজও কেঁপে ওঠে সিনেপ্রামীদের মন । সেই রেখা’কে নিয়েও কিন্তু একদিন সমালোচনা কম হয়নি । দেশের মানুষ তাঁকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়ে, কটূক্তিতে ভরিয়ে দিয়েছে ।


• সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর থেকে তাঁর বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী যে ভাবে দেশের মানুষের মাধ্যমে চরম ট্রোলের স্বীকার হলেন, যে মন্তব্য, ঘৃণা, বিদ্বেষ... ছুড়ে দেওয়া হল একজন বিচারাধীন বন্দীর উদ্দেশ্যে... তাতে আবারও এই প্রসঙ্গ ধরেই ফিরে এল রেখার নাম । একদিন স্বামীর মৃত্যুর অপরাধে জনতার সামনে অসম্মানিত হতে হয়েছিল তাঁকেও ।


• এর আগে বিরাট কোহলির খারাপ ফর্মের জন্য ব্যাপক ট্রোল হতে হয়েছিল কোহলির তৎকালীন গার্ল ফ্রেন্ড অনুষ্কা শর্মাকেও । পুরুষদের কোনও একটা ভুলের জন্য তাঁর স্ত্রী বা বান্ধবী’কে দোষী সাব্যস্ত করার এই ট্রেন্ডের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মুখ খুলেছিলেন বলিউডের অনেক তারকারাই । তবে এই ট্রেন্ড কিন্তু নতুন নয় । রেখার স্বামী যখন বিয়ের মাত্র ৮ মাসেরমধ্যে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করলেন, তখনও এই একই রকমভাবে আঙুল তোলা হয়েছিল রেখার দিকেই ।


• সেটা ১৯৯০ সালের অক্টোবর মাসের ২ তারিখ । সদ্যবিবাহিত রেখার স্বামী মুকেশ আগারওয়াল আত্মহত্যা করেন রেখারই ওড়না গলায় দিয়ে । রেখা তখন লন্ডনে । রেখার জীবনীতে এ সবই লিখেছেন ইয়াসের উসমান । বইটির নাম ‘রেখা: দ্য অনটোল্ড স্টোরি বাই ইয়াসির উসমান’ ।


• রেখা-মুকেশের বিয়ে হয়েছিল ১৯৯০-এর ৪ মার্চ। দিল্লির বড় শিল্পপতি ও শিল্পদ্যোগী ছিলেন মুকেশ । রেখার পাগল ভক্ত ছিলেন। ফ্যাশন ডিজাইনার বীণা রমানি তাঁর সঙ্গে রেখার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন । এর কয়েক মাসের মধ্যেই রেখা’কে বিয়ে করেছিলেন মুকেশ।


• সুশান্তের মতোই মুকেশের জীবনেও আপাতভাবে তেমন কোনও ঝড়ঝাপ্টা ছিল না বলেই জানতেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা । মুকেশের মৃত্যুর পর তাঁর ভাই আনিল জানান, মুকেশ সুখী ছিল ।


• রেখা মুকেশের ভয়াবহ মানসিক অবসাদের কথা জানতে পেরেছিলেন । তবে সেটা বিয়ের পরে। কিন্তু সে জন্য যে মুকেশ এক বড় একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, সেটা বুঝতে পারেননি নায়িকা । মুকেশ কিন্তু তাঁর সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছিলেন ‘‘আমার মৃত্যুর জন্য যেন কাউকে দায়ী করা না হয় ।’’


• কিন্তু তাতেও রক্ষা হয়নি । সে সময় রেখা’কে চরম হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল । বলা হয় তিনি ‘ডাইনি’, ‘পিশাচ’, ‘নিজের স্বামী’কে খেয়েছেন রেখা’ । এমনকি সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুকেশের মা নিজে বলেছিলেন এ কথা- ‘ও ডায়েন, মেরে বেটে কো খা গায়ি । ভগবান ওঁকে কোনওদিন ক্ষমা করবেন না ।’


• অনিল গুপ্ত বলেছিলেন, ‘আমার ভাই রেখা’কে ভালবাসত । তাঁর কাছে ছিল হয় ভালবাসা , না হয় মৃত্যু । রেখা ওঁনার সঙ্গে যেটা করছিল, সেটা সহ্য করতে পারছিলেন না উনি । রেখা যা চাইল সেটাই হল। উনি আমাদের সম্পত্তি হাতাতে চাইছেন ।’’


• মিডিয়াতেও একেরপর এক হেডলাইন হতে থাকে। ‘The Black Widow’, ‘The Macabre Truth behind Mukesh’s Suicide’ ইত্যাদি । শুধু তাই নয়, রেখার উপর অভিযোগ উঠেছিল, তিনিই নাকি নিজের স্বামী’কে খুন করেছেন ।