টাকার অভাবে বোনকে বাঁচাতে পারেননি কাঞ্চন, ছোট থেকেই সংসার তাঁর কাঁধে

ছোট থেকেই বন্ধুরা ফাউয়ের দলে রেখে দিতেন তাঁকে। 'রোগা', 'লম্বা', 'খারাপ দেখতে', এই সব শুনতে শুনতেই বড় হয়েছেন তিনি। কিন্তু নিজের প্রতিভার জেরে আজ তিনি 'কাঞ্চনের' মতোই খাঁটি। তিনি কাঞ্চন মল্লিক। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে নিজের জীবনযুদ্ধের ইতিকথা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন অভিনেতা এবং তৃণমূল বিধায়ক।

বাবার বেসরকারি কারখানায় চাকরি। মা গৃহবধূ। বাড়িতে ছিলেন বোন আর দাদু-দিদাও। কাঞ্চন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ে তাঁর বাবা চাকরি হারান। কারখানায় তালা বন্ধ হয়। দশম শ্রেণিতে ওঠার পর তাঁর বাবার রেটিনাল স্ট্রোক হয়। দৃষ্টিশক্তি হারান কাঞ্চনের বাবা। কাঞ্চনের মাধ্যমিকের আগে পরিবারে ঝড় নেমে আসে।

হঠাৎ করেই তিনি বুঝতে পারেন, ওই পরিবারে তিনি একমাত্র রোজগেরে। দশম শ্রেণির কিশোরের হাতে গোটা সংসারের দায়িত্ব চলে আসে। ঘরে টাকা না এলে পরিবারের ৬ জন না খেতে পেয়ে মরে যাবে। টিউশনি, সেলস, পার্লারে ম্যানেজারি, মদের দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে মদ বিক্রি, নানা রকমের কাজে ঢুকে পড়েন কাঞ্চন।

মানসিক অবসাদে বিধ্বস্ত কাঞ্চন নিশ্বাস নিতে চাইতেন মুক্ত বাতাসে। সেই থেকেই তাঁর থিয়েটারে যাত্রা শুরু। সারাদিনের রোজগারের জন্য যুদ্ধের মাঝের তিনটি ঘণ্টা তাঁর কাছে অক্সিজেনের মতো। ওই ৩টি ঘণ্টার জন্য বাকি ২১ ঘণ্টা লড়াই চালাতে পারেন কাঞ্চন।

থিয়েটারের নাড়িনক্ষত্র চেনা শুরু হল। সেখান থেকেই অভিনয় শেখা কাঞ্চনের। সুযোগ আসতে শুরু করে ধীরে ধীরে। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়ের হাত ধরে 'জনতা এক্সপ্রেস'-এ চেপে বসলেন। শুরু হল রোড শো সঞ্চালনার যাত্রা। প্রবল জনপ্রিয়তা পান তিনি।

৫০০ টাকা প্রতি এপিসোডেও কাজ করেছেন যে কাঞ্চন। নানা সেটে অপমানিত হওয়ারও অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। কিন্তু তিনি অপরাজেয়। খারাপ সময় এসেছে, কিন্তু সেই সময়টাকে কাঞ্চন 'তন্দুর' তকমা দেন। যেখানে পুড়ে পুড়ে আরও জোরালো, শক্তিশালী হয়ে ওঠেন কাঞ্চন।

সাফল্যের পর বিতর্ক পিছু ধরে তাঁর। গত বছর সংসার ভাঙে কাঞ্চনের। প্রাক্তন স্ত্রী পিঙ্কি বন্দ্যেপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেছিলেন অভিনেতা-বিধায়ক। ৯ বছরের সন্তানের সঙ্গে দেখা করতেও আদালতে যেতে হয় তাঁকে। আলিপুর আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা চলছে তাঁর।

তারই মধ্যে অভিনেত্রী শ্রীময়ী চট্টরাজের সঙ্গে কাঞ্চনের বন্ধুত্ব নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক শোনা যায়। স্ত্রী পিঙ্কিও পরকীয়ার অভিযোগ তোলেন তাঁদের বিরুদ্ধে। কাঞ্চন বা শ্রীময়ী যদিও এই গুঞ্জনকে নস্যাৎ করে দেন।

কিন্তু লড়াই, যুদ্ধ শেষে তিনি যে জয়লাভ করেছেন, তা তো স্পষ্ট। তাঁর বিশ্বাস, ভালবেসে কাজ করে গেলে সাফল্য আসবেই।