

মেয়েটার জন্ম, বেড়ে ওঠা আমাদের দেশের এই শহরটাতেই। এখনও ব্যস্ত জীবন সামলে সময় পেলেই হাজার মাইল দূরে এই শহরে ছুটে আসে ছোটবেলার গন্ধ গায়ে মেখে নিতে। কলকাতার মায়া কাটিয়ে বালিগঞ্জের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ইন্দোনেশিয়া পাড়ি দিয়েছিলেন। বয়স তখন আর কত হবে? ২২ কী ২৩! জাকার্তা থেকে প্যারিস হয়ে এখন ইতালি। Story: PARADIP GHOSH, Photo Courtesy: Swati Chaudhuri


শেষ ১৪-১৫ বছর ইতালিই ঠিকানা বালিগঞ্জের বাঙালি কন্যা স্বাতী চৌধুরীর। মিলান, রোম, তুরিন, ভেনিস শহরগুলোকে বালিগঞ্জ, ঢাকুরিয়া, বেকবাগানের অলি-গলির মতই চেনেন। বিদেশ বিভুঁইয়ে খুব কাছ থেকে দেখেছেন করোনা বিপর্যয়-কে। নিউ ইয়ার্স ইভে কলকাতা ঘুরে মিলানে ফিরেছেন জানুয়ারির ২১ তারিখ। আর ঠিক তার এক মাসের মধ্যেই চোখের সামনে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে দেখেছেন সাজানো-গোছানো দেশটাকে। Photo Courtesy: Swati Chaudhuri


ফেব্রুয়ারি শেষ দিকেই করোনা ঠেকাতে লকডাউন চালু হয় ইতালির লোম্বার্ডি প্রদেশে। কলকাতা কন্যার কথায়,"দেখতে দেখতে পাঁচটা সপ্তাহ কাটিয়ে ফেললাম এই লকডাউনেই। প্রথম প্রথম চিন্তা হতো, উদ্বেগ হতো। এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি।" Photo Courtesy: Swati Chaudhuri


হাজার মাইল দূর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে ভেসে আসা স্বরটা ঠান্ডা, অবিচল। উত্তেজনা কিংবা আতঙ্কের ছিটেফোঁটাও নেই। ইতালির মতো উন্নত দেশ ভেঙে পড়লো কী ভাবে? স্বাতী বলেছিলেন,"শত্রু যদি অচেনা হয়, অদৃশ্য হয় তাহলে লড়াইটা অসম হয়ে ওঠে। ক্যান্সার, হৃদরোগ, সেরিব্রালের মত রোগকে আমরা থামিয়ে দিয়েছি অনায়াসে। এবার পারলাম না।" Photo Courtesy: Swati Chaudhuri


স্বাতীর সঙ্গে কথা বলার ফাঁকেই ইন্টারনেটে চোখ রেখে দেখলাম আক্রান্তের সংখ্যা ইউরোপের এই দেশটায় এক লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা ১২ হাজারের ওপর। শিরশিরিয়ে উঠছিল শরীরটা। ফোনের ওপারে যিনি, তিনি তো খোদ মৃত্যুপুরীতে বসে রয়েছেন। মিলানে বিজনেস ইংরেজি পড়ানোর কাজ করেন স্বাতী। বেটার হাফ জর্জ যুক্ত সে দেশের কৃষি ও অর্থনীতিতে।চোখের সামনে মৃত্যু মিছিল..! কথা শেষ করতে না দিয়েই স্বাতী বলে উঠলেন,"আর দেখতে পারছি না। সহ্য করতে পারছি না। আজকেই সুপারমার্কেট গিয়েছিলাম খাবার আনতে। সাহসী, জীবনীশক্তি ভরপুর মানুষগুলো কেমন যেন কুঁকড়ে গিয়েছে।" Photo Courtesy: Swati Chaudhuri


ইতালি সরকার নির্দেশিকা জারি করেছে। করোনা আক্রান্ত ছাড়া হাসপাতালে আসার প্রয়োজন নেই। অন্য যেকোনো অসুখে বাড়ি এসে চিকিৎসা করে যাওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। "আমাদের এখানে জনসংখ্যা কম। তাতেও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা। আমাদের কলকাতা তো জনবহুল শহর। ওখানকার কথা ভেবেই ভয় লাগছে বেশি।" ২৫ বছর আগে দেশ ছেড়ে যাওয়া মেয়েটার গলা প্রথমবারের জন্য কেঁপে যায়। ইতালিয় ঘরনীর অন্তর ফুড়ে বেরিয়ে আসে বঙ্গনারীর সংবেদনশীল মন। মৃত্যুপুরী মিলানে বসেও নিজের শহর কলকাতার জন্য উথাল-পাতাল হয় বঙ্গললনার হৃদয়। এটাই বোধহয় স্বদেশের টান! জন্মভূমির টান! Photo Courtesy: Swati Chaudhuri