

করোনা সংক্রমণের জেরে ২০২০ সাল দেশের ব্যাঙ্কিং সেক্টরের জন্য অত্যন্ত কঠিন সময় ছিল। তবে সবাই এক হয়ে লড়ার চেষ্টা করেছে। এক দিকে ২০ লক্ষ কোটি টাকার অর্থ প্যাকেজের ঘোষণা করা হয় সরকারের তরফে। সেখানে কিছুটা হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগপতিদের ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। অন্য দিকে, আপ্রাণ চেষ্টা চালায় ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু এর মাঝেই দেশের ব্যাঙ্কগুলির উপর NPA-এর বোঝা ক্রমে বেড়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার একটি ব্যাড ব্যাঙ্ক সিস্টেম আনার কথা ভাবছে। কিন্তু কী এই ব্যাড ব্যাঙ্ক? আসুন জেনে নেওয়া যাক বিশদে!


কী এই ব্যাড ব্যাঙ্ক? ব্যাড ব্যাঙ্কের বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে আলোচনা চলছে। যদি এ নিয়ে গভীরে পর্যবেক্ষণ করা যায় তাহলে দেখা যাবে, ভারতীয় ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে এই মুহূর্তে NPA-এর মোট পরিমাণ ৮.৫ শতাংশ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমান, মার্চ মাস পর্যন্ত এই NPA-এর পরিমাণ বেড়ে ১২.৫ শতাংশ হয়ে যাবে। তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে এই পরিসংখ্যান ১৪.৭ শতাংশের কাছেও পৌঁছাতে পারে। এক্ষেত্রে জমা সম্পত্তি ফেরত আনার ক্ষেত্রে এগ্রিগেটর হিসেবে কাজ করে এই ব্যাড ব্যাঙ্ক সিস্টেম। অর্থাৎ এই ব্যাড ব্যাঙ্ক সিস্টেমের সাহায্যে ব্যাঙ্কগুলির উপর থেকে NPA-এর বোঝা কমানো যেতে পারে।


বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, যেখানে ব্যাঙ্কগুলিতে NPA-এর পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। তাই সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ও আসন্ন বাজেটের কথা ভেবে এ নিয়েও পদক্ষেপ করতে পারে অর্থমন্ত্রক। এক্ষেত্রে নিশ্চয়ই কোনও রোডম্যাপ বানাবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ (Nirmala Sitharaman)। আর সেদিকেই তাকিয়ে দেশবাসী। তবে, ব্যাড ব্যাঙ্ক নিয়ে কার্যত দ্বিধা বিভক্ত সরকার। সরকারের একাংশের মতে RBI-এর অনুমতি ব্যতীত এই ব্যাড ব্যাঙ্ক সিস্টেম আনা অসম্ভব। এক্ষেত্রে ক্যাপিটাল ইনফিউশনের প্রসঙ্গও উঠে আসে।


প্রসঙ্গত, ব্যাড ব্যাঙ্ক সিস্টেম আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গত বছর ১৮ ডিসেম্বর CII-এর এক ওয়েবিনারে ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সের সচিব তরুণ বাজাজ (Tarun Bajaj) জানিয়েছেন, দেশের অর্থনীতি সচল রাখার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এক্ষেত্রে ব্যাড ব্যাঙ্ক-সহ একাধিক বিকল্প নিয়ে বিচার-বিবেচনা চলছে। তবে এখনও অপেক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে সমস্ত বিষয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।


সরকার সূত্রে খবর, এই বছর বাজার থেকে প্রায় ৬০,০০০ কোটি টাকা তুলতে চলেছে পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কগুলি। এর পাশাপাশি, ইতিমধ্যেই ইক্যুইটি ও বন্ড ফান্ডের মধ্য দিয়ে প্রায় ৪০,০০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে সরকারি ব্যাঙ্কগুলি। একই সঙ্গে চলতি অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত ২০,০০০ কোটি টাকার রি-ক্যাপিটালাইজেশনে স্বীকৃতি মিলেছে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত কোনও রি-ক্যাপিটালাইজেশন হলে, তা আগামী অর্থবর্ষেই হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ব্যাড ব্যাঙ্ক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।