পশ্চিম মেদিনীপুর: অনেকেই মিউজিয়ামে যায় পুরনো জিনিস দেখতে। আঞ্চলিক অনেক জিনিস আছে যেগুলি বর্তমানে হারিয়ে যাচ্ছে। এখনকার প্রজন্ম সেগুলির হদিশ পায় না। অথচ একসময় এই জিনিসগুলোই মানুষের প্রাত্যহিক কাজে লাগত। সেই সব আঞ্চলিক পুরনো জিনিসের সংগ্রহশালা গড়েছেন বেলদা থানার জাহালদার বাসিন্দা কালাইলাল মহাপাত্র।
নিজের বানানো কাঠ ও শিকড়ের অনেক কারুকার্য নিজেই তৈরি করেছেন। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও সন্ধান পেয়ে অনেকেই সংগ্রহশালা দেখতে চলে আসেন। অনেকেই আবার তাদের সংগ্রহে থাকা জিনিস দিয়ে যান কানাইলালকে। দীর্ঘ শিক্ষকতার জীবন। তার পর অবসর জীবনে বুঁদ হয়ে প্রাণ পেয়েছে তার সংগ্রহশালা। ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে তৈরি নানান সামগ্রী।
ছোট বয়েস থেকেই সংগ্রহের নেশা ছিল। অবসর জীবনে সেই নেশা আরও প্রগাঢ় হয়েছে। কী নেই তার সংগ্রহে ! পুরনো দেশি, বিদেশি নোট, কয়েনের পাশাপাশি ব্যবহৃত নানান জিনিসে ঠাসা। ১৯২৪ সালের ১ মার্কিন ডলারের কয়েন, ২০ মার্কিন ডলারের নোট, ১০পাউণ্ড ব্রিটেনের, ১০রেণ্ড দক্ষিণ আফ্রিকার, ওমান, উজবেকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশ, নেপাল, আরব আমিরশাহী, কুয়েতের নোট। প্রায় চোদ্দটি দেশের। পুরনো তামা ও পেতলের পয়সা। সংগ্রহশালাতে এসে ছোট থেকে বড় সকলেই পুরনো হারিয়ে যাওয়া জিনিস দেখতে পারে।
আগেকার দিনের পয়সা, নোট সম্পর্কে এখনকার ছেলে-মেয়েদের ধারণা হবে। কড়ি আছে। এসব সংগ্রহ করাই তার নেশা। পুরনো দিনের ব্যবহৃত কাঁসা, পাথর, রুপো এবং পিতলের হুঁকো। আগেকার দিনে ব্যবহৃত পঞ্চপ্রদীপ, পিলসুজ,পানের সাজি,পঞ্চাশ বছর আগের দশ-বারো কেজি ভেটকি মাছের কাঁটা। সংগ্রহে আছে সাইকেলে ব্যবহৃত ব্যাটারি লাইট, হংকং-এ ব্যবহৃত টর্চ। গ্রামোফোন। ডায়াল ল্যাণ্ড ফোন। মারফি রেডিও। বলে শেষ করা মুশকিল। নিজের বাড়ির ছাদে যত্ন করে বেশ বড় সংগ্রহশালা বানিয়েছেন। অনেকেই আসেন দেখতে। সম্ভার অনেক। রয়েছে পোস্টকার্ড, ছবি তোলা আগেকার ক্যামেরা, ইংরেজ আমলের স্টোভ, তীর, ধনুক, বর্শা, খড়্গ, জিওল মাছ ধরার যন্ত্র, হরিণের শিং, বাইসনের শিং, সামুদ্রিক প্রবাল, একতারা নিজের বানানো, পদ্মনাভি কাঠ, পুরাতন টেথোস্কোপ। এরকম আরও অনেক জিনিস।
আরও পড়ুন: চলছিল দুপুরের রান্না, হঠাৎ শুরু হল গ্যাস লিক, দাউদাউ আগুন, তারপর...
শুধু সংগ্রহ নয়, শিল্পী মানুষ কানাইলাল। পঁচাত্তর বছর বয়সেও উৎসাহে খামতি নেই। তার হাতে তৈরি বেশির ভাগ ফেলে দেওয়া কিংবা পরিত্যক্ত কাঠ দিয়ে দুই শতাধিক কাঠের কাজ আছে। নানাধরনের ফেলে দেওয়া জিনিস তার হাতে আকার লাভ করে। শিল্প সুষমায় ভরে ওঠে সাধারণ জিনিস। অবসর জীবন এভাবেই কাটছে।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলায় জেলায় পুলিশের রদবদল! একসঙ্গে বদলি একগুচ্ছ IPS অফিসার
১৯৫০ সালে দাঁতন ২ ব্লকের ব্রাহ্মণখলিসাতে জন্ম। কর্মসূত্রে জাহালদাতে চলে এসেছেন। একাধিক গুণের অধিকারী মানুষটি। বাড়ির সামনে বাগান করেছেন। বাগানেও ঝোঁক আছে। ক্যাকটাস, বনসাই, বাহারী ও ফুলের গাছ আছে। আনাজ চাষও করেন। বনসাইয়ের নেশা আছে। আবার নিজের হাতে বানান নকশী কাঁথা। সেখানে ফুটে ওঠে বিবাহ অনুষ্ঠান কিংবা মঙ্গল কাব্যের কাহিনি।
Ranjan Chanda
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Museum, West Medinipur News