#দুর্গাপুর : সফল সন্তান হয়ত তাদেরকেই বলে। হয়ত তাকেই বলে সফল একজন মা। যিনি সারাদিন হাড় ভাঙা পরিশ্রম করেছেন শুধুমাত্র মেয়েদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে। পুরো গল্প জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে বছর সাতেক আগে। সাল ২০১৬। দুর্গাপুরের ৩ বোন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেছিল ৭০ শতাংশ নম্বর নিয়ে। পরিচারিকা মা অভাবের সংসারে টেনেটুনে পড়িয়েছিলেন মেয়েদের। তিন মেয়েকে ভর্তি করেছিলেন একই ক্লাসে। যাতে করে একসেট বই নিয়ে তিনজন পড়তে পারেন। আর মায়ের সেই পরিশ্রমের ফল, তিন সফল কন্যা। যারা আজ সকলেই নিজের নিজের মতো করে প্রতিষ্ঠিত। যদিও চলতি বছরের প্রয়াত হয়েছেন সেই পরিচারিকা মা প্রতিমা কর্মকার। তবে মায়ের সারাদিনের হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর লড়াইয়ে আজ উজ্জ্বল রুমা, সোমা এবং লক্ষ্মী কর্মকারের জীবন।
২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হতেই সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছিল এক পরিচারিকা মায়ের লড়াই এর গল্প। সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল এক পরিচারিকার তিন কন্যার সাফল্য। খবর ছড়িয়ে পড়তেই তিনজনকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন কন্যার একজন সোমা কর্মকার। যিনি জটিল কানের রোগে ভুগছিলেন। তার অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করানো হয়েছিল। পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে দেওয়া হয়েছিল আর্থিক সাহায্য।
পরিচারিকা মায়ের সেই লড়াই, এবং সরকারি সহায়তা পেয়ে আজ সফল প্রতিমা কর্মকারের তিন মেয়ে - সোমা কর্মকার, রুমা কর্মকার এবং লক্ষ্মী কর্মকার। তাদের বাবা প্রয়াত হয়েছেন বহু আগেই। ছোট থেকে তাদের অভাবের সংসারে বড় করেছিলেন প্রতিমা কর্মকার। বিভিন্ন জায়গায় পরিচারিকার কাজ করে মেয়েদের বড় করেছেন তিনি। চলতি বছরের এ মাসেই প্রয়াত হয়েছেন তিনি। তবে সেই অভাবেই পরিচালিকা এক মেয়ে বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ার, এক মেয়ে শিক্ষক এবং এক মেয়ে ব্যাঙ্কে কর্মরত।
তবে আজ প্রতিষ্ঠিত হলেও তারা এখনও লেখাপড়া ছাড়েননি। আরও বড় হতে চান তারা। তাই আজও চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনা। ছোট্ট একটা খুপড়ি ঘর, আর সেখানেই তিন বোন আর মায়ের বসবাস ছিল। মা পরিচারিকার কাজ করেই সংসার চালাতেন। মেয়েরাও পরিচারিকার কাজ করেছেন। কিন্তু মেয়েদের লেখাপড়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখেননি তাদের মা প্রতিমা কর্মকার।
অর্থের অভাব ছিল। তাই বয়সের ফারাক থাকলেও তিন বোনকেই এক ক্লাসেই ভর্তি করেন প্রতিমা দেবী। তিন সেট আলাদা আলাদা বইয়ের বদলে, এক সেট বইয়ের তিনজন পড়াশোনা চালিয়েছেন। বর্তমানে সোমা কর্মকার এখন ওড়িশায় কর্মরত। একটি বিখ্যাত বহুজাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থায় কাজ করছেন সোমা কর্মকার। লক্ষ্মী কর্মকার এক বেসরকারি ব্যাঙ্কে কাজ করছেন। সঙ্গে বি টেক পড়ছেন তিনি। আর রুমা কর্মকার নামী স্কুলে শিক্ষকতা করার পরে এখন গৃহশিক্ষকতাও করছেন। আজও মায়ের সেই লড়াইকে হাতিয়ার করে ভবিষ্যতে আরও বড় হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন দুর্গাপুরের সফল তিন কন্যা।
Nayan Ghosh
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Bardhaman, Bardhaman news