#কলকাতা: "সচিন স্যার বলেছে আমাকে বিরাটের মতো ভারতীয় দলে খেলতে হবে। আমি ভারতের হয়ে খেলে অনেক অনেক রান করতে চাই। আমি ভালো খেলতে পারলে আমাকে রোজ টিভিতে দেখাবে।" কথাগুলোর বক্তা মাত্র পাঁচ বছরের শেখ শাহিদ। আধো আধো উচ্চারণে থেমে থেমে কথাগুলো বলে যাচ্ছিল বেহালার বিস্ময় প্রতিভা শেখ শাহিদ। কথা বলতে বলতেই বাবা শেখ শামসেরের কাছে বারবার দাবি, "জোরে জোরে বল করতে হবে। সচিন স্যার যা যা বলেছে সেগুলো ঠিক ঠিক করতে হবে।" মুম্বই থেকে ক্রিকেট ঈশ্বরের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেরার পর থেকেই মাত্র ৫ বছরের শেখ শাহিদ ক্রিকেটকে আরও বেশি করে ভালোবেসে ফেলেছে।
আসলে এক সপ্তাহে সচিন শেখ শাহিদের মাথায় ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। আরও স্বপ্ন দেখতে শিখিয়ে দিয়েছেন। তাই গুছিয়ে কথা বলতে না পারলেও পাঁচ বছরের শেখ শাহিদের ব্যাট প্রতিমুহূর্তে জবাব দিয়ে যাচ্ছে। বাড়ির সামনে একফালি উঠোন হোক কিংবা অনুশীলনের মাঠ সচিনের শেখানো কথাগুলো নিজের মধ্যেই বলতে বলতে প্র্যাকটিস করে চলেছে শেখ শাহিদ অর্থাৎ জনপ্রিয় ডাইপার কোহলি। বাবার সঙ্গে প্র্যাকটিস শেষ করার পর শেখ শাহিদ জানায়, "সচিন স্যার ব্যাট এবং গ্লাভসে দাগ দিয়ে দিয়েছে সেভাবেই ব্যাট ধরতে হবে। একদম সোজা করে। ব্যাট একটু তুলে রাখতে হবে। তাহলে ভালো করে বল মারতে পারবো।"
শেখ শাহিদের আড়াই বছর আগে যার ভিডিও দেখে তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন দেশ-বিদেশের তাবড় তাবড় ক্রিকেটাররা। ২০১৯ ডিসেম্বরের সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বছর তিনেকের শিশুর ব্যাটিং ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। ৩৯ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায় ডাইপার পড়ে এক ছোট্ট বাচ্চা ব্যাট করে চলেছে। যে বয়সে সে কথা বলতে শেখেনি সেই সময় থেকেই নিখুঁত ব্যাটিং। ব্যাটের গ্রিপ থেকে স্টেট ড্রাইভ, লং ড্রাইভ, কভার ড্রাইভ একেবারে নিখুঁত ভঙ্গিতে খেলে চলেছে সেই শিশুটি। ইংল্যান্ডের তারকা কেভিন পিটারসন সেই ভিডিও দেখে বিরাট কোহলিকে ট্যাগ করে উৎসাহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। বিরাট ওই বিস্ময় বালকের ট্যালেন্ট দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল। জানতে চেয়েছিলেন কোথায় থাকে সেই বিস্ময় প্রতিভা। তারপরেই সেই খুদে প্রতিবার খোঁজ মেলে কলকাতায়।
আরও পড়ুন- সৌরভের পাড়া থেকে সচিনের অ্যাকাডেমি, প্রশিক্ষণ নিয়ে কলকাতা ফিরল বিস্ময় বালক
জানা যায় সেই শিশুটি কলকাতার বেহালার বাসিন্দা। তারপর বাকিটা ইতিহাস। দেশ-বিদেশের একাধিক সংবাদ মাধ্যমের ভিড়ে রাতারাতি তারকা বনে যান খুদে শেখ শাহিদ। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক স্টিভ ওয়া স্বয়ং পৌঁছে যান বেহালার সেই বিস্ময় ক্রিকেট প্রতিভার বাড়িতে। নিজের আত্মজীবনী এবং ভারতের ক্রিকেট নিয়ে তথ্যচিত্রে শেখ শাহিদকে জায়গা দেন স্টিভ। সেই সময়ে সেলুন কর্মী শেখ শামসেরের ছেলে শেখ শাহিদের পাশে এসে দাঁড়ান বিভিন্ন ক্রিকেটার থেকে ক্লাব কর্তারা। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের এক কর্তার উদ্যোগে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হয় শেখ শাহিদ। শুরু হয় ক্রিকেট প্রশিক্ষণ। তারপর আরও কেটে গেছে আড়াই বছর। ক্রিকেট প্রশিক্ষণ চালিয়ে গেছে শেখ শাহিদ। প্রতিভা আরও ক্ষুরধার হয়েছে। একটু একটু কথাও বলতে শিখেছে।
দিন কয়েক আগে শেখ সাহিলের বাবা আরও একটি ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেন। ট্যাগ করে দেন সচিনকে। তারপর দিন কয়েকের মধ্যেই ফোন আসে মাস্টার ব্লাস্টারের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ শিবির থেকে। প্রস্তাব দেওয়া হয় মুম্বই গিয়েছে সচিনের কাছ থেকে এক সপ্তাহ প্রশিক্ষণের জন্য। সেলুন কর্মীর ছেলের জন্য এই সফরের সমস্ত খরচ বিমান থেকে থাকা খাওয়া সব দিয়ে দেন সচিন। তারপর মাস্টারের সঙ্গে সাত দিনের অনুশীলন। ক্রিকেট ভগবানের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এখনও বিস্ময় কাটছে না শাহিদের পরিবারের। পাঁচ বছরের শেখ শাহিদের খেলা দেখে হন উচ্ছ্বসিত সচিন। কীভাবে ব্যাট ধরতে হবে। ব্যাটিংয়ের সময় স্ট্যান্স কী হবে। কী করে নিখুঁত ডিফেন্স করা যায়। মাথার ব্যালেন্স কীরকম রাখতে হবে ব্যাট করার সময়। সবকিছু হাতে ধরে শিখিয়ে দেন মাস্টারব্লাস্টার।কলকাতায় ফিরে যাতে সঠিক অনুশীলন হয় তার পরামর্শ দেন। প্রয়োজনে আবার মুম্বই যেতে বলেন।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Sachin Tendulkar