#নয়াদিল্লি:
সুরেশ রায়না সগর্বে বলেছেন, তিনি ব্রাক্ষ্ণণ। রবীন্দ্র জাদেজার আবার রাজপুত হওয়ার জন্য গর্বের শেষ নেই। ক্রিকেটে এসব হচ্ছেটা কী! কেন খেলার মাঠেও জাতপাত হানা দিচ্ছে! ক্রিকেটাররা এসব বলে আসলে কী প্রমাণ করতে চাইছেন! রায়না কিছুদিন আগে এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, ব্রাক্ষ্ণণ হওয়ার জন্যই নাকি তাঁর চেন্নাইয়ের সংস্কৃতি বুঝতে সুবিধা হয়েছিল। ওদিকে আবার জাদেজাও নিজেকে রাজপুতের ছেলে বলে পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করছেন। এমন পরিস্থিতে একজনের কথা না বললেই নয়। তিনি আজীবন খেলার মাঠে এই ধরণের জাতপাতের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।তিনি ছিলেন ভারতীয় প্রথম দলিত ক্রিকেটার। জাতপাতের বিরুদ্ধে খেলার মাঠে তিনিই প্রথম লড়াই শুরু করেছিলেন। ১৯ শতকে এদেশের খেলার মাঠে হানা দিয়েছিল জাতপাত। তখন দেশে ইংরেজ শাসন। ১৮৯২ সালে পালওয়াঙ্কার বালু নামের সেই ক্রিকেটার পুনের ক্লাবে চাকরি পেলেন। মাসমাইনে ৪ টাকা। সেই সময় পুনের ওই ক্লাবে শুধু ব্রিটিশদের খেলার অধিকার ছিল। বালু ছিলেন পিচ ও মাঠ দেখাশোনার দায়িত্বে। একটা সময় ইংরেজরা বালুর ক্রিকেট প্রতিভা সম্পর্কে জানতে পারে। বালুকে ব্যাটিং করতে দেওয়া হত না। দিনের পর দিন নেটে ইংরেজদের বোলিং করা শুরু করলেন বালু। অসাধারণ বোলার হয়ে উঠলেন বালু। স্পিনার হিসাবে নিজেকে তৈরি করলেন।
সেই সময় হিন্দু, মুসলিম, পার্সিদের আলাদা ক্লাব হত। পুনেতে এমনই একটি হিন্দুদের ক্লাব প্রতিষ্ঠা হল। সেই ক্লাবের কর্তারা বালুকে তাদের দলে নিতে চাইল। কারণ ব্রিটিশ ক্লাবের বিরুদ্ধে জিততে হলে বালুর মতো বোলারকে দলে প্রয়োজন। কিন্তু বালু তো দলিত। তাই তাঁকে দলে নেওয়া হবে কি না দ্বন্দ্বে পড়ে গেলেন সেই হিন্দু ক্লাবের কর্তারা। শেষমেশ বালুকে দলে নিলেন তাঁরা। পুনের সেই হিন্দু ক্লাব ব্রিটিশ দলের বিরুদ্ধে একের পর এক ম্য়াচ জিতল। আর সেটা হল তাদের কোয়ালিটি বোলিংয়ের জন্য। কিন্তু জাতপাতের বেড়াজেল থেকেই গেল। বালুকে চা দেওয়া হত আলাদা কাপে। মাঠে একসঙ্গে খেললেও বালুর সঙ্গে খেতে বসত না ক্লাবের কেউ। ১৮৯৬ সালে পুনেতে প্লেগের দাপট শুরু হল। সেই সময় মুম্বইতে ক্রিকেটের বাড়বাড়ন্ত শুরু। বালু কাজের খোঁজে চলে এলেন মুম্বইতে। সেখানে এসেই হিন্দু জিমখানার হয়ে খেলতে শুরু করেন বালু।
১৯০৬ সালে বালুর দুরন্ত বোলিংয়ে ব্রিটিশ দলকে হারায় জিমখানা। তার পর ১৯১১ সালে প্রথম ভারতীয় দল ইংল্যান্ড সফরে যায়। সেই দলে ছিলেন বালু। সিরিজ হারলেও বালুর পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। ইংল্যান্ডের বেশ কিছু ক্লাব বালুকে নিতে চেয়েছিল। তবে বালু দেশে খেলবে বলে নাছোড়বান্দা। একটা সময় লোকমান্য তিলক, ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর পর্যন্ত বালুর দুরন্ত স্পিন বোলিং দেখে প্রশংসা করেছিলেন। তবে এদেশের ক্রিকেটে দলিত বালুকে উঠে দাঁড়াতে প্রচণ্ড কষ্ট করতে হয় আজীবন। শুধুমাত্র দলিত ছিলেন বলে বালুর যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও জিমখানা ক্লাবের অধিনায়ক হতে পারেননি। এদেশে জাতপাত একটা রোগের মতো। সেই রোগের ওষুধ আজও আবিষ্কার হয়নি। তাই আজও রায়না, জাদেজারা আক্রান্ত হন।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Ravindra Jadeja, Suresh Raina