#কলকাতা: সংগঠনকে শক্তিশালী করতে তৃণমূল স্তরের কর্মীদের সঙ্গে 'একাত্মতা' তৈরি করতে চান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুঅধিকারী। সেই লক্ষ্যে দলীয় 'প্রবাস' ও 'বুথ সশক্তিকরন ' কর্মসূচিতে সহ কর্মীদের সঙ্গে বসে একসাথে খাওয়া দাওয়া করার পরিকল্পনা করেছেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর এই বিশেষ কর্মসূচির নাম 'সহভোজ'।
ভোট এলেই, এ রাজ্যে বিজেপির দিল্লির নেতাদের আসা যাওয়া শুরু হয়৷ আগের সঙ্গে তফাৎ একটাই, আগে দিল্লির নেতারা লোকসভা ভোটের সময়েই এ রাজ্যের দিকে ফিরে তাকাতেন। এখন, পঞ্চায়েত ভোটের আগেও তাঁদের আনাগোনা। ২০১৪-র লোকসভা ভোট থেকে ২০২১- এর বিধানসভা ভোট। নির্বাচনের দামামা বাজলেই এ রাজ্যের মানুষ দেখেছে দিল্লি থেকে কখনও অমিত শাহ, কখনও জে পি নাড্ডারা উড়ে এসেছেন রাজ্যে। দলীয় ভাষায় 'প্রবাস' করতে।
বিজেপির দলিল, দস্তাবেজে তার নাম যাই হোক না কেন, আসলে এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য দলের নিচু তলার কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে, তাঁদের উজ্জীবিত করা। রাজনৈতিক ভাবে বার্তা দেওয়া।
আরও পড়ুন: আয়তনে ৮০ ফুট বাই ৪৬ ফুট! সাজছে বিরাট মঞ্চ! ধর্মতলায় একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি তুঙ্গে
দলের এই প্রবাস কর্মসূচিতে শাহ, নাড্ডারা কখনও পৌঁছে গিয়েছেন নকশালবাড়ির কোনও দলিত পরিবারে, কখনও বা বনগাঁর কোনও মতুয়া পরিবারে। কর্মীদের সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠক, মিছিল বা জনসভার পাশাপাশি, শাহ, নাড্ডাদের মানুষ দেখেছে ওই দলিত, মতুয়া বাড়িতে 'পাত পেড়ে' খেতে, রীতিমতো সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরাকে স্বাক্ষী রেখে। উদ্দেশ্য একটাই, অঙ্ক কষে দলিত- মতুয়া ভোটের রাজনীতি।
লের একাংশের মতে, এই সমস্ত কর্মসূচির পরেও এ রাজ্যে বিজেপির সংগঠনকে কতটা উজ্জীবিত করা গিয়েছে বা দলিত, অনগ্রসর শ্রেণির ভোট কতটা বেড়েছে, সেটা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে বিশ্লেষণের বোধহয় সময় এসেছে৷
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে, দলীয় সংগঠনকে ঘুরে দাঁড় করাতে এবারেও নিয়মমাফিক কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। দলীয় প্রবাস কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যে এসেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানী, প্রতিমা ভৌমিক, কপিল মোরেশ্বর পাটিল, রামেশ্বর তেলি। আসবেন জ্যোতিরাদিত্ত সিন্ধিয়ার মতো হেভিওয়েট মন্ত্রীরাও।
আরও পড়ুন: কয়লা পাচারকাণ্ডে লালা-সহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে প্রথম চার্জশিট জমা দিল সিবিআই
পর্যবেক্ষকদের মতে, শুভেন্দু মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার কালী মন্দিরে গিয়ে প্রণাম করে বিজেপির সনাতনী ধর্ম রাজনীতিকে যেমন উস্কে দিয়েছেন, তেমনই দত্তপুকুরে কর্মীসভার শেষে নিচু তলার নেতা, কর্মীদের সঙ্গে পংতি ভোজন বা সহভোজ করে তাঁদের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার বার্তা দিলেন।
শুভেন্দুর কথায়, 'পার্টি একটা গাইড লাইন করে দিয়েছে। অমিত শাহরা দলিত পরিবারে গিয়ে ভোজন করেছেন। আবার, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তার কর্মসূচি করতে গিয়ে বাইক মিছিল করছেন। আমরা সবাই দলীয় কর্মসূচিই করছি।'
এই মূহুর্তে, রাজ্য বিজেপির অন্যতম প্রভাবশালী জননেতা শুভেন্দু মুখে বিষয়টিks গুরুত্ব দিতে না চাইলেও, রাজনৈতিক মহলের মতে, এ রাজ্যের মেঠো রাজনীতিতে পোড় খাওয়া নেতা শুভেন্দু, সংগঠন কী জিনিস তা ভাল ভাবেই জানেন। বিশেষ করে, রাজ্যে ক্ষমতায় না আসার ধাক্কা থেকে শুরু করে, একাধিক নির্বাচনে পর্যুদস্ত বিজেপির নিচু তলার কর্মীদের আন্দোলনমুখী করাই যখন এই মূহুর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
সাংগঠনিক রদবদলের জেরে, দলীয় কোন্দলে অধিকাংশ জেলাতেই মণ্ডল, বুথস্তরের সংগঠনের অবস্থা তথৈবচ। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিতে বা দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে গিয়ে আক্রান্ত কর্মী যদি নেতৃত্বের উপরে ভরসা রাখতে না পারেন, তাহলে আসল '' যুদ্ধ" জয় সম্ভব নয়। তার জন্য নিচু তলার কর্মীর সঙ্গে আত্মীয়তা, একাত্মবোধ গড়ে তোলা দরকার।
অতীতে, দোর্দাণ্ড প্রতাপ সিপিএমকে রুখে দিয়ে নন্দীগ্রাম সহ পূর্ব মেদিনীপুরকে অধিকারী গড়ে পরিণত করার পিছনে শুভেন্দুর এই সাংগঠনিক কৌশলই তাঁকে সাফল্য এনে দিয়েছে। ২৪- এর নির্বাচনের আগে রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দলের সন্ত্রাসের মোকাবিলা করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হলে, নিচু তলার কর্মীদের সঙ্গে নেতৃত্বকে একাত্ম হতে হবে। রাজ্য বিজেপির অন্যতম লড়াকু নেতা হিসাবে সেই দায়িত্ব নিজেই নিতে চান শুভেন্দু।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: BJP, Suvendu Adhikari