#আসানসোল: ভোর তিনটের আসানসোল স্টেশন। খবরে কাগজে চোখ বোলান ফুলেশ্বরী। খবরের কাগজে নারীমুক্তি আন্দোলন আর প্রগতির কথা অনেক পড়েছেন। সেই খবরের কাগজই আজ তাঁর নিত্যসঙ্গী । প্রথম পাতা জুড়ে জ্বলজ্বল করছে খবরের শব্দ। খবরের কাগজে কোথাও খুন, ধর্ষণ, দুর্ঘটনা, রাজনীতি কিংবা আরও কত খবর। তাতে তাঁর কী? তবুও প্রতিদিন সেই খবরই এখন তাঁর বেঁচে থাকার সঙ্গী। লড়াইয়েরও।
ভোর চারটের সময় অন্ধকারের মধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন ফুলেশ্বরী। সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে যান আসানসোল রেল স্টেশন। ট্রেনে করে নানান খবরের কাগজ স্টেশনের প্লাটফর্মে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই সেই খবরের কাগজ সংগ্রহ করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া। খবরের কাগজে দড়ি বেঁধে কারও ব্যালকনি বা বারান্দায় ছুড়ে দেন ফুলেশ্বরী। কখনও পথচলতি মানুষের হাতেও তুলে দেন খবরের কাগজ। কখনও বা আবাসনের সিঁড়ি বেয়ে উঠে খবরের কাগজ বিলি। আসানসোল শহরের অসংখ্য পরিবারের কাছে রোজ সকালে নিজে সাইকেল চালিয়ে এপ্রান্ত ওপ্রান্ত ঘুরে ঘুরে খবরের কাগজ পৌঁছে দেন ফুলেশ্বরী। তাঁর মাধ্যমেই দেশ দুনিয়া, নিজের এলাকার খবরের সন্ধান পান পাঠকরা।
দুপুরে বাড়ি ফিরেই জল নিতে কলের লাইনে দাঁড়ানো। সেই জল উঠবে ভাতের হাঁড়িতে, তবেই ভাত উঠবে পরিবারের সবার মুখে। পরিবারে একমাত্র রোজগেরে ফুলেশ্বরী মণ্ডল। একে অভাবের সংসার। তার উপর বাড়িতে অসুস্থ বাবা, মানসিক বিকারগ্রস্ত মা এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ভাই। আসানসোলের বড়তোড়িয়ায় নেপালিবস্তির কাছে ছোট্ট একটি ঘরে গাদাগাদি করে থাকেন তাঁরা। ফুলেশ্বরীর কথায়, বাবা বিনোদ মণ্ডলের বয়স হয়েছে। তাই আর কাগজের হকারি করতে পারেন না। গ্র্যাজুয়েট হয়েও আর পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি ফুলেশ্বরী। বাবার পেশাকেই আঁকড়ে ধরতে হয়েছে সংসার চালাবার দায়ে। ভাই উত্তম মণ্ডল শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। মা-ও অসুস্থ। গোটা পরিবারে মুখে ভাত আর ভাই ও মায়ের চিকিৎসার খরচ তুলতে এইভাবেই রোজগার করতে হয় তাঁকে।
শহরের অলি-গলি থেকে গ্রামের মেঠো রাস্তায় প্রতিদিন ছোটেন ফুলেশ্বরী। বিরক্তির কোনও ছাপ নেই তাঁর চোখে-মুখে। ভোর থেকে দুপুর। গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা। শীত থেকে বসন্ত। ছুটি নেই। শরীর খারাপের অজুহাত নেই। সামাজিকতা নেই, নেই উৎসবে সামিল হওয়া। সারা বছরই ছুটতে হয় তাঁকে। না ছুটলে যে ভাত জুটবে না পেটে । জেলার একমাত্র মহিলা খবরের কাগজের হকার। নারী দিবসের বিশেষ দিনে নারী প্রগতির বার্তা নিয়ে আজও ছুটে চলেছেন ফুলেশ্বরী। খবরের ফেরিওয়ালা হয়ে। আজ আরও একটা নারী দিবস। সমাজে নারী-পুরুষের তফাতের মধ্যে নিজেদের মতো করে মাথা উঁচু করে এগোনোর চেষ্টা করছেন অনেকেই। বাংলার নানা প্রান্তে রয়েছে এমন অজস্র কাহিনী। ফুলেশ্বরী তাঁদেরই অন্যতম। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই পেশাকেই আঁকড়ে ধরে রাখতে চান ফুলেশ্বরী। প্রতিদিনের সংগ্রাম, লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরে গেলে তো বেঁচে থাকার স্বপ্নটাই ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। ফুলেশ্বরীর কথায়, 'স্বপ্ন দেখতে চোখ লাগে না। মনের জোর লাগে।'
ভেঙ্কটেশ্বর লাহিড়ীনিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Asansol, International Women's Day