#সিউড়ি: নবান্ন নয় গ্রাম বাংলার প্রচলিত কথায় 'লবান'। আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যা কালিপুরের 'গোল বাড়িতে' জমে উঠেছে তিনদিনের গানের আখড়া বাউলদের মিলন ক্ষেত্র। উদ্দেশ্য গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নবান্ন বা লবানকে ঘিরে আনন্দ গানে মজে থাকা। জাতি - ধর্ম নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সবার দেখা এক মিলন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে এই জায়গা। বিভিন্ন জায়গা থেকে শিল্পীরা এসে উপস্থিত হয়েছেন এখানে।
বছর দশেক আগে সাধক বাউল হরিদাস দাসের আকাল মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিতে খড়-বাঁশ -মাটি দিয়ে ‘পৃথিবী আকৃতির’ একটি সাধনক্ষেত্র- ‘গোলবাড়ি’ তৈরি করেন হরিদাসের সখা এবং শিষ্য নিতাই দাস বাউল। কড়িধ্যা কালিপুর গ্রামের শেষ প্রান্তে মাঝমাঠে গড়ে উঠা সেই সাধনক্ষেত্রের গোলবাড়ির নামই আখড়া চর্চা। সেখানেই গত দশ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী লবান উৎসবের আয়োজন করে আসছেন নিতাই দাস বাউল। উৎসব উপলক্ষ্যে ওই গোলবাড়িটিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। বাড়ির বাইরে দিকে মাটির দেওয়ালের উপর দেওয়া হয়েছে আলপনা। মূলদ্বার দিয়ে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে সুন্দর গোলবাড়ি এবং তার আশপাশে তৈরি করা বেশকিছু ছোট ছোট অস্থায়ী কুটির।
গোলবাড়ির সামনে মাটিতে খড় বিছিয়ে রাখা নানান ধরনের বাদ্যযন্ত্র- একতারা, দোতারা, খনজনি, খোল প্রভৃতি। আর সেই বাদ্যযন্ত্র নিয়ে সাধনায় মগ্ন হয়েছেন শিল্পীরা। আর কুটিরগুলিতে ডেরা নিয়েছেন বাইরে থেকে আসা শিল্পী এবং তরুণ সুর রসিকরা। ওই আখড়ায় বাউল, কিত্তন, ফকিরি, ভাদু, টুসু, কবির সহ নানান ধরনের গানের আসর জমেছে। কেবল এই জেলা নয় মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান সহ বিভিন্ন এবং বিভিন্ন রাজ্য থেকে সঙ্গিত শিল্পীরা এসে থাকেন। এমনকি বাংলাদেশ থেকেও শিল্পীরা এসেছেন। এক সময় অগ্রহায়ণের ফসল উঠলেই বাড়িতে বাড়িতে পালিত হত নবান্ন উৎসব। এখনও গ্রামাঞ্চলে সেটা হয়ে থাকে কিন্তু শহরাঞ্চলে আস্তে আস্তে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই উৎসবকে বাঁচিয়ে রাখতে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।" বাউল গানের সুরে মজেছে এলাকা। সৃষ্টিধর বাদ্যকর যিনি একজন মনসাগান শিল্পী, সেখ জাফর তিনি জন বাউল শিল্পী, নিমাই ক্ষাপা - বাউল শিল্পীরা তো রয়েছেই এই বছর বাংলাদেশ থেকে এসেছেন পারুল বালা সরকার।