#কলকাতা: বিকেলে দলনেত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা। বৈঠকের আশ্বাস দেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো। আর সেদিনই সন্ধ্যায় শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠকে বসলেন বিদায়ী মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। বুধবার সন্ধেয় বিধায়ক তথা দাপুটে তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি ও শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কী কথা হল, সেই নিয়েই সরগরম রাজ্য রাজনীতি।
বৈঠকের পর পরই নিউজ এইট্টিন বাংলাকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে জিতেন্দ্র তিওয়ারি বললেন , "শুভেন্দুবাবুর সঙ্গে আগে থেকেই এই সৌজন্য সাক্ষাতের দিন ঠিক ছিল। আমরাই যোগাযোগ করি শুভেন্দুবাবুর সঙ্গে। তিনি আমাকে ও দীপ্তাংশুকে সুনীল মন্ডলের বাড়িতে আসার অনুরোধ জানান । সেই মতই আমরা কাঁকসায় যাই।"
কিন্তু কেন হঠাৎ শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠক করার আগ্রহ দেখালেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি? নিছকই সৌজন্য সাক্ষাৎ নাকি রাজনৈতিক কোনও আলোচনা হয়েছে? প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে জিতেন্দ্র খোলাখুলি বললেন , 'হ্যাঁ রাজনীতির কথা হয়েছে । শুভেন্দুবাবু আমাকে বললেন আমি তো বিজেপিতে শীঘ্রই যোগ দিচ্ছি। আপনারাও আসুন । একসঙ্গে কাজ করা যাবে'। যদিও জিতেন্দ্রবাবুর দাবি, 'শুভেন্দুর আবেদনে তাঁরা সাড়া দেননি। শুভেন্দুকে জিতেন্দ্র এও বলেন,' দলের অন্য কোনও নেতার ওপর ভরসা না থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর এখনও তাঁর ভরসা আছে। যেহেতু খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় আমাকে নিজে ফোন করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। আমার ক্ষোভের কারণ শুনবেন বলেছেন তাই এক্ষুনি দলবদলের কথা ভাবছি না বলে শুভেন্দু অধিকারীকে স্পষ্ট জানিয়েছি'।
তবে একই সঙ্গে তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, আগামী দিনে কখন কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে এখন তা বলার সময় আসেনি। এই আবহে রাজনৈতিক মহলে বেশ কিছু প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে । কেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি ফিরহাদ হাকিমকে উদ্দেশ্য করে বিস্ফোরক চিঠি লিখলেন ? ক্রমাগত কেন নেতৃত্বকে বেনজির আক্রমণ করছেন ? যদিও ঘনিষ্ঠ মহলে জিতেন্দ্র বলছেন , নেত্রীর প্রতি তাঁর কোনও ক্ষোভ নেই। অনেক নেতা তাঁকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছেন না। সেই তালিকায় ফিরহাদ হাকিমও রয়েছেন। এখন দেখার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জিতেন্দ্র তেওয়ারির বৈঠকের পর বরফ গলে কিনা। তবে জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে কেন্দ্র করে যে জল্পনা শুরু হয়েছে তার শেষ কোথায় ? উত্তর দেবে সময়ই ।
জিতেন্দ্রর বেসুরোর নেপথ্যে কী দীপ্তাংশু? এই জল্পনা জোরালো হচ্ছে ক্রমশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে যাকে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান করা হয়েছে সেই দীপ্তাংশু চৌধুরী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠকে বসাকে মোটেই ভালো চোখে দেখছে না দল । বলা ভালো, দীপ্তাংশুর ভূমিকায় হতবাক তৃণমূল শিবির। বিজেপি- জিতেন্দ্র- শুভেন্দুর মধ্যে সেতু কী তাহলে দীপ্তাংশুই ? সূত্রের খবর , গত শুক্রবার জিতেন্দ্রর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন দীপ্তাংশু। এদিন দুপুরে আসানসোল পুরনিগমের প্রশাসক বোর্ডের প্রধান জিতেন্দ্রর পুরনিগমের চেম্বারে টানা বেশ কয়েক ঘন্টা ক্লোজ ডোর বৈঠক হয় জিতেন্দ্র- দীপ্তাংশুর মধ্যে। সেদিনের বৈঠকের সময় বিদায়ী কাউন্সিলর থেকে প্রশাসক বোর্ডের সদস্য কাউকেই ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সেদিনই নিজে এবং জিতেন্দ্রর রাজনৈতিক পালাবদলের ব্লুপ্রিন্ট চূড়ান্ত করতেই কি রুদ্ধদ্বার বৈঠক? এদিনই কি কথা হয় শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক করারও ? পরিকল্পনা করেই কি জিতেন্দ্র তিওয়ারির চড়া সুর ? একের পর এক বেসুরো কথা?
অবশেষে সুনীল মন্ডলের বাড়িতে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বুধবার বৈঠকে হাজির দীপ্তাংশু- জিতেন্দ্র। বিজেপির একসময়ের বাবুল সুপ্রিয় ঘনিষ্ঠ দীপ্তাংশু চৌধুরী দলবদলে তৃণমূল শিবিরে আসে। বেশকিছু জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক করা হয় দীপ্তাংশু চৌধুরীকে। পরবর্তী সময়ে পর্যবেক্ষক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়ে তাঁকে বলেও খবর। করা হয় দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার চেয়ারম্যান। জিতেন্দ্রর পাশাপাশি শাসকদলের কড়া নজরে এখন দীপ্তাংশুও। শেষ পর্যন্ত রাজনীতির ময়দানে জল কতদূর গড়ায় সেটাই এখন দেখার।
--VENKATESWAR LAHIRI