হোম /খবর /দেশ /
করোনা কালে আমূল বদলে গিয়েছে দিঘা, লাল কাঁকড়া আর সবুজ কার্পেটের দখলে বালিয়াড়ি

করোনা কালে আমূল বদলে গিয়েছে দিঘা, বালিয়াড়ির দখল নিয়েছে লাল কাঁকড়া আর সবুজের কার্পেট

লকডাউন বদলে দিয়েছে দিঘার সমুদ্রতটের ছবি।

লকডাউন বদলে দিয়েছে দিঘার সমুদ্রতটের ছবি।

এই নতুন রূপে দিঘাদর্শনে ব্যাপক খুশি দিঘায় আসা পর্যটক থেকে স্থানীয় মানুষজন সকলেই!

  • Share this:

#দিঘা: এ যেন অন্য দিঘা! যেখানে সৈকতভূমির আঁকেবাঁকে দঙ্গল বেঁধেই ফিরে এসেছে সবুজ সাগরলতা গুল্মলতা গাছ। সঙ্গে সৈকতের বালিপথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানো লাজুক লাল কাঙড়ার দলও চোখ টানছে সকলের। আর এই নতুন রূপে দিঘাদর্শনে ব্যাপক খুশি দিঘায় আসা পর্যটক থেকে স্থানীয় মানুষজন সকলেই!

একটানা করোনার আক্রমণ। সঙ্গে লকডাউন আর আমফান তান্ডবের ধাক্কা। এসবের জেরেই সৈকতে ভ্রমণের ওপর কখনও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা, তো কখনও আবার দেওয়া হয়েছে শর্তসাপেক্ষ ছাড়। গত ৬/৭ মাসের বেশিরভাগ সময়ই সৈকত জুড়ে ছিল নির্জনতা। আর এমন নির্জনতাই যেন দিঘার বালিয়াড়ি জুড়ে ফিরে এসেছে সাগরলতার সবুজ কার্পেট।

মানুষের পায়ের শব্দ কম থাকার কারণে অবাধেই ঘুরে বেড়ানো লাল কাঁকড়ার দলবলেরও এখন দেখা মিলছে। বেলাভূমিতে লাল কাঙড়ার বিচরণ এবং দিঘার নিজস্ব অতি প্রাচীণ সবুজ সাগরলতা ডালপালা মেলতে শুরু করেছে দেখে খুশি সকলেই।

তথ্য বলছে সমুদ্র সৈকতের ভাঙন রোধ ও শুকনো উড়ন্ত বালুরাশি আটকে বালিয়াড়ি তৈরির মূল 'কারিগর' হচ্ছে সাগরলতা গুল্মলতা। আর এইসব সমুদ্র তীরবর্তী বাঁধের বালিয়াড়িকে সাগরের রক্ষাকবচ বলা হয়। কারণ ঝড়-তুফান, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের সময় উপকূলকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করে এইসব বালিয়াড়ি। যা পায়ের জঙ্গল আর আধুনিকতার ধাক্কায় দিঘা থেকে উবেই যাচ্ছিল বলে স্থানীয়দের দাবি। নষ্ট হচ্ছিল বাস্তুতন্ত্র। তবে করোনাকালে কোলাহলমুক্ত সৈকত পেয়ে এখন আবার উঁকি দিচ্ছে সেই সবুজ সাগরলতা গাছ। যা পরিবেশের জন্য খুব ইতিবাচক বলেই মনে করছেন বন দপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা। হিসেব বলছে, পর্যটনের বাড়বাড়ন্ত এবং মানুষের আনাগোনার ও আগ্রাসী মনোভাবের কারণেই সমুদ্র সৈকত বেশ বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। যে কারণে দিঘা মোহানা থেকে উদয়পুর পর্যন্ত অনেক বড় বড় বালিয়াড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। উপকূলে বেড়েছে ভাঙন। সৈকতজুড়ে এক সময় যে গোলাপি এবং অতিবেগুনি রঙের ফুলে ভরা সাগরলতা গুল্মলতা গাছ দেখা যেত। যা পর্যটকদের কাছেও ছিল বাড়তি আকর্ষণের, সেসব ক্রমে ক্রমে হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু করোনা কঠিন পরিস্থিতিতে নির্জনতার সুযোগেই যেন সমুদ্র সৈকত তার নিজস্বতা ফিরে পাচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, প্রাণ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য বাঁচানো এবং পর্যটনের স্বার্থে সৈকতের এই প্রাকৃতিক পরিবর্তন যথেষ্ট ভালো দিক নির্দেশই করছে।

প্রকৃতিপ্রেমীদের কথায়, সৈকতের পরিবেশগত পুনরুদ্ধারে সাগরলতার মতো দ্রাক্ষালতা বনায়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ফ্লোরিডা এবং অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সৈকতের হ্যাস্টিং পয়েন্টসহ বিশ্বের বিভিন্ন সৈকতে বালিয়াড়ি সৃষ্টিতে সফল হয়েছে। সেসব মাথায় রেখেই, সৈকতের ক্ষয়রোধ ও সংকটাপন্ন পরিবেশ পুনরুদ্ধারে সাগরলতার যত্ন নিক দিঘার প্রশাসন।

সাগরলতা ন্যূনতম পুষ্টিসমৃদ্ধ বেলে মাটিতেই বেড়ে উঠতে পারে। তার জলের প্রয়োজনীয়তাও কম হয়। উচ্চ লবণাক্ত মাটিতেও দ্রুত বেড়ে ওঠে সে। শিকড় মাটির তিন ফুটের বেশি গভীরে যেতে পারে। বাইরে থেকে কোনো রকম হস্তক্ষেপ না করা হলে এই গুল্মলতাটি চারিদিকে বাড়তে থাকে এবং সর্বোচ্চ সামুদ্রিক জোয়ারের উপরের স্তরের বালিয়াড়িতে জাল বিস্তার করে মাটিকে আটকে রাখে। এরপর বায়ু প্রবাহের সঙ্গে আসা বালি ধীরে ধীরে সেখানে জমা হয়ে মাটির উচ্চতা বাড়ায়। এতে সাগরলতার ও সৈকতের মাটির স্থিতিশীলতা তৈরি হয়। সাগরলতার ইংরেজি নাম রেলরোড ভাইন, যার বাংলা শব্দার্থ করলে দাঁড়ায় রেলপথ লতা। আসলে এটির দৈর্ঘ্য রেলপথের মতোই লম্বা সাইজের। একটি সাগরলতা একশো ফুটেরও বেশি লম্বা হতে পারে। এর বৈজ্ঞানিক নাম -pomea pes caprae।সাগরলতা সৈকতের অন্য প্রাণী যেমন, বিভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়া ও পাখির টিকে থাকার জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাগরলতার সবুজ পাতা মাটিকে সূর্যের কিরণ থেকে এমনভাবে রক্ষা করে, যাতে সূর্যের তাপ মাটি থেকে অতিরিক্ত জল বাষ্পীভূত করতে না পারে। এতে মাটির নিচের স্তরের উপকারী ব্যাকটেরিয়াসহ অন্য প্রাণীর জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। বালিয়াড়ি ও সাগরলতা না থাকলে আরো অনেক প্রাণী পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাবে। সৈকতের সৌন্দর্যায়ন রক্ষার কাজেও সাগরলতার ভুমিকা রয়েছে। সমুদ্র সৈকত না থাকলে যেহেতু দিঘার পর্যটন শিল্প টিকতে পারবে না। সেহেতু পর্যটনের স্বার্থেও বালিয়াড়ি ও বালিয়াড়ি উদ্ভিদ রক্ষার মাধ্যমে দিঘার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীতা রয়েছে বলেই মত দিঘার বন আধিকারিকদের।

*SUJIT BHOWMIK*

Published by:Arka Deb
First published:

Tags: Digha