SUJIT BHOWMIK
#পটাশপুর: কনকনে ঠান্ডার মধ্যেই নদীর তীর পেরিয়েই কাতারে কাতারে পূণ্যার্থীরা নেমে পড়ছেন কেলেঘাইয়ের চরে। নদীতে নেমে ডুবও দিচ্ছেন সকলেই। এই উপলক্ষে আজ থেকেই পটাশপুরে বসে গেছে মেলা-তুলসী চারার মেলা। চলবে আগামী ১৫ দিন ধরেই। চলবে পুজোপাঠ ও উৎসব।অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার অন্যতম প্রাচীন এই মেলাকে ঘিরে নানা জনশ্রুতি রয়েছে। প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন এই মেলা। এখনও খুবই জনপ্রিয়। পটাশপুর ও সবং এলাকার ২-৩টি মৌজা নিয়ে (গোকুলপুর, খাউখান্ডা, কোলন্দা) মেলা বসে। পটাশপুরের গোকুলপুর গ্রামে নদী বক্ষে আছে তুলসী মঞ্চ। যেন ছোটনাগপুর থেকে আসা কেলেঘাইয়ের আদরে মাখা আমাদের গর্বের পটাশপুর। ভূগোল বলবে এ হল বিশাল রাঢ়, ব-দ্বীপ সমভূমি। শুধু কেলেঘাই নয়, সঙ্গে আছে বাগুই আর অসংখ্য খাল, বিল।
প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে তুলসী চারার মেলা শুরু হয়। আর, এই তুলসী মন্দিরকে কেন্দ্র করেই এই মেলার নামকরণ-তুলসী চারার মেলা। পটাশপুরের গোকুলপুর গ্রামে অষ্টাদশ শতকের বাকসিদ্ধ বৈষ্ণব শ্রী শ্রী গোকুলানন্দ গোস্বামী বৈষ্ণবচার্যরূপে বন্দীত্ব। নদীর মাঝখানে চড়া বিশালাকার সমাধি মন্দির। বয়স্কদের কথায়, গোকুলানন্দ সবং-এর কোলন্দা গ্রামের নামকরা জমিদার পরমানন্দ ভূঞ্যার ভান্ডারী ছিলেন। বেশিরভাগ সময়ই সাধন ভজনে ব্যস্ততার মধ্যে থাকতেন। পরমানন্দের ছেলে বিপ্রপ্রসাদ গোকুলানন্দের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
তারপর, একদিন নাকি গোকুলানন্দ বাবাজি পৌষ সংক্রান্তিতে রাত ১২টা নাগাদ নদীর মাঝখানে, তাঁর যোগমঞ্চে সাধনা করতে করতে, সমাধিপ্রাপ্ত হয়ে যান। যা কথিত আছে দেহরক্ষার আগে রেখে গিয়েছিলেন। গোকুলানন্দ বাবাজি তাঁর শিষ্য বিপ্রপ্রসাদকে ডেকে বলে যান পৌষ সংক্রান্তির রাত বারোটার পর, মানে- সংক্রান্তির মনোস্কামনাপূরণ হবে। তাই পৌষ সংক্রান্তির ভোরে শত শত নর-নারী পুন্যস্নান করে গোকুলানন্দ বাবাজির তুলসী মঞ্চে তিন মুঠা মাটি কেলেঘাই নদী থেকে তুলে দান করেন। স্থানীয় পটাশপুর, সবং এলাকাসহ দুই জেলার মানুষ এসে তুলসী মঞ্চে মাটি দিয়ে পূজা নিবেদন করেন।
সম্প্রতি, কেলেঘাই নদী বাঁধের সংস্কার সম্প্রসারণ হয়েছে, যার ফলে মেলাটি ১৩-১৪ একর জায়গা জুড়ে মেলা বসে। আগে মেলা বসতো একদিনের জন্যে। দাদু-ঠাকুমারা বলতেন-ভীমরুল পোকার কামড় ও বাঘের ভয় থাকতো। এখন সেটা আর নেই। এখন একদিন থেকে ৭দিন ধরে মেলা হয়। আমরা একটা বছর অপেক্ষা করে থাকি। তুলসী চারার মেলার বিশেষত্ব হলো তুলো। বহুদিন আগে ভথেকেই নানা ধরনের তুলো কেনা বেচার জন্য বিখ্যাত। মেলার বিশাল অংশ জুড়ে বসে তুলোর দোকান। বৈষ্ণবদের জন্য এই মেলায় খোল (মৃদঙ্গ) বিক্রি হয়। এছাড়াও মাটির হাঁড়ি, কলসি, লোহার সামগ্রী, শাক-সব্জির দোকান, মাছের বাজার, সবং-পটাশপুরের পরিচিত মাদুর, অমর্ষি ও বাগমারির শঙ্খ, মিষ্টি দোকান, হোটেল প্রভৃতি।