SHANKU SANTRA
#ফ্রেজারগঞ্জ: ডেস্টিনেশন ফ্রেজার গঞ্জ।শুনেই ভাববেন, সেই সমুদ্র, কয়েকটা ঝাউ গাছ, সমুদ্র সৈকত আর গলা কাটা খাবারের দাম! এক থেকে দু’দিনের বেশি ওখানে থাকা যায় না। বকখালি নাম বেশিরভাগ পর্যটক জানেন। সেই দিনটা শেষ। ফ্রেজারগঞ্জ পঞ্চায়েত এলাকা লম্বায় প্রায় ১০ কিলোমিটার, চওড়া প্রায় চার কিলোমিটার। এর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে সুন্দরী মহিমা। নতুন সেই মোহময়ী সৈকতের নাম কালীস্থান । এই কালীস্থানের মাহাত্ম্য রয়েছে অনেক। কালী ঠাকুরের নাম অনুযায়ী, নাম হয়েছে কালীস্থান।
এই কালী কোনও ঝকমকে বসন, কিংবা সাজানো গোছানো মন্দিরে থাকেন না। ওখানে স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, এই কালী খুব জাগ্রত। তিনি নাকি তাঁর এক ভক্তকে স্বপ্ন দেখিয়ে বলেছিলেন, তাঁর ছেলেরা নদীতে জীবন নিয়ে বিনিদ্রায় ভাসে। সেহেতু সে এই ভাবেই ঐশ্বর্য্যহীন ভাবে থাকবেন। তাই নদীর পাড়ে জঙ্গলে কালী প্রহরীর মত থাকেন। এই কালীস্থান বঙ্গোপসাগরের ঠিক মোহনার মুখে অবস্থিত।
পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে লুথিয়ান নদী, ওপারে লুথিয়ানের জঙ্গল রয়েছে। বিশাল লম্বা বালির সৈকত। ডান দিকে গরান, বানীর জঙ্গল। সেই জঙ্গল চোখ ভরিয়ে দেয়। সুন্দরবনের আসল সুন্দর রূপ। সারাদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দারুন ভাবে কাটিয়ে দেওয়া যায় ওখানে। নীল আকাশের নিচে ম্লান রূপোলী বালির চাদর। জোয়ারের সময় ছোট্ট একটি খারিতে নৌকা চড়া। রোমাঞ্চকর পরিবেশ। কেউ আপনাকে ব্যাঘাত ঘটাতে আসবে না।
এটি বকখালি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। সন্ধ্যাবেলায় নদীর চরে বসে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার। একটু আগে থেকে অর্ডার দিয়ে দিতে হবে, পুকুরের জ্যান্ত মাছ, চিংড়ি কিংবা দেশী মুরগীর ঝোলের জন্য। খুব স্বল্প দামে সব কিছু পাওয়া যাবে। ডিনার সেরে ফিরে পড়তে পারেন বকখালি লজে।এখনও ওখানে কোনও থাকার আবাসন তৈরি হয়নি। তবে হোম স্টের ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। ওখানে যেতে গেলে নামখানা থেকে বাসে করে বকখালির আগে কয়লা ঘাটা বাস স্টপেজে নেমে ভ্যান কিংবা টোটোতে করে গ্রামের ভেতর দিয়ে কালীস্থান চরে চলে যাওয়া। ভাড়া ১০ টাকা মাথা পিছু। বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা।
ইদানিংকালে ওখানে পর্যটকেরা যাচ্ছেন, সারা দিনযাপন করছেন। গ্রামের প্রতিটি মানুষ পর্যটকদের পেয়ে সব রকম সহযোগিতা করতে নিজে থেকেই এগিয়ে আসেন। তাঁদের কথায় অতিথি সেবা তাঁদের কর্তব্য। ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে কালিস্থানের কালীকে কেউ ভুলে যাচ্ছেন না। একবার করে যাচ্ছেন, নিজেদের মনের কথা জানিয়ে আসছেন মা’কে। প্রত্যেকের বিশ্বাস, তাঁদের ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে মায়ের দর্শনও সার্থক হচ্ছে।