#ভেঙ্কটেশ্বর লাহিড়ী, কলকাতা: তখন ব্রিটিশ শাসন। হুগলি জেলার শ্রীরামপুর ব্লকের অন্তর্গত আকনা গ্রামের বাসিন্দা গোপিচরণ ঘোষ পিতৃভূমি ত্যাগ করে আশ্রয় নিলেন খানাকুল থানার বলপাই গ্রামে। মহারাজা পুত্রদ্বয়ের কর্তব্য নিষ্ঠায় মুগ্ধ হয়ে বেশ কিছু সম্পত্তি দান করলেন। এলাকা তখন বর্ধমান মহারাজার জমিদারি এস্টেটের অন্তর্গত। গোপিচরণবাবু যখন এলেন বংশ তালিকা অনুযায়ী তিনি ছিলেন তাঁর বংশের একবিংশ প্রজন্ম। ভক্তি ক্রমেই তাঁর মনকে ব্যাকুল করে তুলল। নিজের বাড়িতে নারায়ণ শিলা স্থাপন করলেন। প্রতিষ্ঠিত হল শ্রীধর জিউড় মন্দির। যা এখনও নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও বংশের কল্যাণ কামনার উদ্দেশ্যে গোপীচরণবাবু ১২০১ সালে মহামায়া দুর্গাপুজোয় ব্রতী হন। খড়ের চাল যুক্ত একটি ছোট্ট ঘরে দুর্গাপুজোর প্রথম সূচনা হয়। ১৩১০ সালে যা পাকা মণ্ডপে রূপান্তরিত হয়। মন্দিরটি পশ্চিম মুখী। মন্দির সংলগ্ন আটচালাটি অনুরূপ সময় তৈরি হয়। দুর্গা মন্দিরের ঠিক দক্ষিণে দ্বিতল বিশিষ্ট শ্রীধর জিওর মন্দির নামে পরিচিত। ইনি বংশের গৃহদেবতা। নিত্যসেবা পুজো হয়। উত্তরে আছে শীতলা দেবীর মন্দির। এই দুর্গাপূজার ঐতিহ্য বহু প্রাচীন।
হুগলি জেলার প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম। এই পুজোর বর্তমান বয়স ২২৯ বছর। সন্ধিপুজোয় এখনও জলঘড়ির ব্যবহার হয় এখানে। ছোট একটি তামার পাত্র অন্য একটি জলপূর্ণ পাত্রে ভাসানো হয়। এটিকে বলা হয় তাঁবু। এটি ডুবতে সময় লাগে ২৪ মিনিট ২৪ সেকেন্ড। এটি কতবার ডুবলে সন্ধিপুজোর কাজ আরম্ভ হবে তা গাণিতিক নিয়মে বের করা হয়। সন্ধিপুজো দিনের বেলায় হলে তা সূর্যোদয়ের সময়, আর রাত্রিবেলায় ঠিক সূর্যাস্তের সময় এই তাঁবু ভাসানো হয়। এই তামার বাটি বর্ধমান মহারাজার দান। সেই প্রথা এখনও চলে আসছে।
সন্ধিপূজায় ৪০ কেজি আতপ চালে নৈবেদ্য দেওয়া হয়। আগে জমিদারের উপসত্ত্ব থেকে এই পুজোর খরচ বহন করা হলেও বর্তমানে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নেওয়া হয়। জমিদারি উচ্ছেদের পর এই এস্টেটের অধিকাংশ জমি এই আইনের আওতায় পড়ে। ফলে আয় কমে যাওয়ায় এই পুজোয় পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে বর্তমানে আয়োজন করা হয় এই দুর্গাপুজোর। নবমীর দিন হয় ১০৮ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, ধুনো পোড়ানো, হোম ইত্যাদি।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: District Durga Puja 2022