#বর্ধমান: অনেক দাগী আসামি হদিশ পেতে দুঁদে গোয়েন্দাকেও ঘোল খেতে হয়। কিন্তু চারটে ছাগল যে এভাবে নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে তা আগাম বুঝে উঠতে পারেননি পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার পুলিশের কর্মী অফিসাররা। উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরতে দেখে চারটি ছাগলকে থানায় ধরে এনেছিল ভাতার থানার পুলিশ।
মনে করা হয়েছিল ছাগলের পিছু পিছু আসবেন তাদের মালিক। বেঁধে রাখার পরামর্শ দিয়ে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে ছাগলগুলি। কিন্তু কোথায় কি! ছাগলের মালিকের কোনও পাত্তাই নাই। এদিকে খাবার না পেলেই পুলিশ অফিসারদের দিকে মুখ তুলে চিৎকারে থানা মাথায় করছে তারা। চোর ছ্যাঁচোরদের হাল-হকিকত হিসেবে রাখার মাঝেই সেই ছাগলদের জন্য এখন বট পাতা, কাঁঠালপাতা জোগাড়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে পুলিশকর্মীদের। থানা থেকে আবার ছাগল চুরি হয়ে পুলিশের মুখ পোড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সুযোগ বুঝে পালিয়ে গেলেও মুশকিল। তাই তাদের ওপর সর্বক্ষণের নজরদারির জন্য মোতায়েন করতে হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ার।
সবমিলিয়ে ছাগল নিয়ে এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা ভাতার থানার পুলিশের। ছাগলের মালিকের মুখ চেয়ে এখন রাস্তার দিকে তাকিয়ে ভাতার থানার পুলিশ। চুরি ছিনতাই বা মারধরের অভিযোগ তো সব থানাতে লেগেই রয়েছে। তার ওপর আবার ভাতার থানা এলাকায় ইদানিং ছাগল চুরির রমরমা দেখা দিয়েছে।
ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন ছাগল নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে থানায় এসেছেন। চোর বাটপাড় তবু ধরা যায়, কিন্তু ছাগল খুঁজে বের করা সত্যিই কঠিন ব্যাপার। তাছাড়া তা পুলিশের কাছে অসম্মানেরও বটে। তেমনই পরিস্থিতিতে পাঁচ দিন আগে বলগোনা বাজারে চারটি ছাগলকে ঘুরতে দেখে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। কিছুক্ষণ পরে সেইসব ছাগল লোপাট হয়ে যাবে এবং তার জন্য তদন্তে নামতে হবে সেই আচ করে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা ছাগলগুলিকে আটক করে পুলিশ ভ্যানে তুলে থানায় নিয়ে যায়। মালিক এলে দু-চার কথা শুনিয়ে তার হাতে ছাগলগুলি তুলে দেওয়া হবে উদ্দেশ্য ছিল এমনটাই।
সমস্যার শুরু তারপর থেকেই। খাবার না পেয়ে টনক নড়ে পুলিশের। আসামীদের রুটি তরকারি দিয়ে ঠান্ডা করা যায় কিন্তু কথায় ছাগলে কিনা খায় বলা হলেও তার খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে। সকাল হলেই বট পাতা কাঁঠাল পাতা জোগাড়ে বেরিয়ে পড়তে হচ্ছে পুলিশকর্মীদের। বিড়ম্বনা বাড়িয়ে একটি ছাগল আবার থানার মধ্যে দুই সন্তানের জন্ম দিয়েছে। বাকিদের দেখভালের পাশাপাশি ওই প্রসূতি ও তার শিশুদেরও বিশেষ কেয়ার নিতে হচ্ছে পুলিশকে।
পাঁচ দিন পরও ছাগলের মালিকের দেখা না পেয়ে এখন কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে থানার অফিসারদের। এই ছাগলগুলোকে নিয়ে এখন কি করা হবে তা ভেবে কুল পাচ্ছেন না তাঁরা। পুলিশ কর্মীরা বলছেন, নাবালক ছেলে মেয়েদের হোমে পাঠানো যায়। কিন্তু ছাগলগুলোকে পাঠাব কোথায়! এখন উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে ছাগলের মালিক এসে সেগুলিকে নিয়ে যাবেন সেই অপেক্ষায় দিন গুনছেন ভাতার থানার পুলিশ কর্মী অফিসাররা।
Saradindu Ghosh