হোম /খবর /দক্ষিণবঙ্গ /
তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে পটেশ্বরী দুর্গার পুজো হয়ে আসছে বর্ধমান রাজবাড়িতে

তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে পটেশ্বরী দুর্গার পুজো হয়ে আসছে বর্ধমান রাজবাড়িতে

ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে বর্ধমানের রাজ হাবেলি। তিন শতকেরও বেশি প্রাচীন। অতীতে তা কত সুন্দর ছিল তা বুঝিয়ে দেয় টিকে থাকা অবশিষ্ট অংশটুকু।

  • Share this:

#বর্ধমান: বয়সের বলিরেখার মতো আগাছায় জড়িয়ে রয়েছে শরীর। সংস্কারের অভাবে জীর্ণ। ভেঙেও গেছে অনেক অংশ। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে বর্ধমানের রাজ হাবেলি। তিন শতকেরও বেশি প্রাচীন। অতীতে তা কত সুন্দর ছিল তা বুঝিয়ে দেয় টিকে থাকা অবশিষ্ট অংশটুকু। শতাব্দীপ্রাচীন শ্যাওলায় বদলেছে ইটের রঙ। ঝরে পড়েছে চুন সুড়কি। তারই মধ্যে সুন্দর সব নকশা জানান দেয় রাজ ঐতিহ্যের। দিনেও গা ছমছমে পরিবেশ। এই হাবেলির ভেতর বর্ধমান রাজবাড়ির লক্ষ্মী নারায়ণ জিউ মন্দির। পাতালে শিব, মা চন্ডীকার নিত্যপুজোর সঙ্গে এখানেই পূজিতা হন পটেশ্বরী দুর্গা।

পটে আঁকা দুর্গা। নাম তাই পটেশ্বরী। তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে বর্ধমান রাজবাড়িতে এই পটে আঁকা দুর্গার পুজো হয়ে আসছে। বর্ধমানের মহারাজ মহাতাব চাঁদ এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। প্রথম দিন থেকেই সেই পটে পুজো হয়ে আসছে। পট বদল না হলেও বারো বছর অন্তর পটের অঙ্গরাগ হয়।

বর্ধমান রাজবাড়ির কুলদেবতা লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ এবং কেশব জিউ। কুলদেবী মা চন্ডীকা। নিত্যপুজো হয় তাঁদের। মহারাজ মহাতাবচাঁদের ইচ্ছে হল দুর্গা পুজো করার। ডাক পড়ল রাজপুরোহিতের। সভাপন্ডিতকেও ডাকা হল। কুলপুরোহিত বিধান দিলেন যেহেতু মা চন্ডীকা রয়েছেন তাই আলাদা করে আর দুর্গাপ্রতিমা আনা যাবে না। মহারাজ চাইলে প্রতিমার বদলে পটে আঁকা দুর্গা র পুজোর আয়োজন করতে পারেন। সেইমতো দাঁইহাট থেকে শিল্পী আনিয়ে পট আঁকা হল। শুরু হল বর্ধমান রাজবাড়ির দুর্গাপুজো।

পটের পিছনের চালচিত্রে রয়েছে নানান পৌরানিক কাহিনী। এছাড়া দশপ্রহরনধারিনী দুর্গার সঙ্গে বাহনসহ লক্ষ্মী সরস্বতী কার্তিক গনেশ সবাই রয়েছেন। প্রতিমার বদলে পটে এঁকে পুজো হলেও রাজ আমলে নিষ্ঠা ও আড়ম্বরে কিছুমাত্র ঘাটতি ছিল না। প্রজারা পুজো দেখতে হাজির হতেন রাজবাড়িতে। প্রসাদ, অন্নভোগ খেয়ে বিকেলে মেলা দেখে রাতে যাত্রা পালাগান শুনে ভোরে বাড়ি ফিরতেন তাঁরা। কলকাতার নামি যাত্রাদল আসতো। আমন্ত্রণ জানানো হতো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। জমিদার, বন্ধু রাজারাও সপরিবারে আসতেন।

রাজ আমল বিলুপ্তির পর সেই জাঁকজমক এখন আর নেই। মন্দির জীর্ন। ঝাড়বাতি অদৃশ্য হয়েছে অনেক আগেই। তবে এখনও রীতিমেনে নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো হয়। এখানে পুজো নদিনের। প্রতিপদ থেকে পুজো শুরু হয়, চলে নবমী পর্যন্ত। আগে একশো ঢাকের শোভাযাত্রা করে মহাসমারোহে কৃষ্ণসায়র থেকে ঘট আনা হতো। এখন ঘট ভরা হয় গঙ্গাজলে। আগে সুপারি বলি হলেও এখন তা বন্ধ। তবে রাজকুমার প্রতাপচাঁদ মহাতাব সস্ত্রীক আসেন পুজোর দিনগুলিতে। নিজে পুজো করেন তিনি। এখনও নবমীতে কুমারী পুজো হয়। এই মন্দির চত্ত্বরে গুজরাতি সমাজের নবরাত্রি উৎসব হয়। ন রাত ধরে চলে ডান্ডিয়া নৃত্য। তবে এবার করোনা পরিস্থিতিতে এই উৎসব না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

Published by:Dolon Chattopadhyay
First published:

Tags: District Durga Puja 2020