#নন্দীগ্রাম: নন্দীগ্রামে মৃত বিজেপি কর্মীর বাড়িতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়৷ একই সঙ্গে রাজ্যে সরকারি মদতে রাজনৈতিক হিংসার চলছে বলে অভিযোগ তুলে সরব হলেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও নিশানা করেছেন রাজ্যপাল৷ রাজনৈতিক হিংসা চললেও মুখ্যমন্ত্রী তা উপেক্ষা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যপাল৷
এ দিন সকালে কলকাতা থেকে বিএসএফ-এর হেলিকপ্টারে নন্দীগ্রামের হরিপুরে পৌঁছন জগদীপ ধনখড়৷ সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী মূলত নন্দীগ্রামের এক নম্বর ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরেন রাজ্যপাল৷ কেন্দামারি, নন্দীগ্রাম বাজার, বঙ্কিম মোড়ের মতো বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি৷ নন্দীগ্রামে ভোটের পর যাঁদের বাড়ি ঘর ভাঙচুর হয়েছে, তাঁদের অভিযোগও শোনেন রাজ্যপাল৷ গ্রামের ভিতরে ঢুকতে মোটরবাইকের পিছনেও উঠে বসেন তিনি৷ এর পর মহম্মদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চিল্লাগ্রামে রাজনৈতিক সংঘর্ষে নিহত বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতির বাড়িতে যান রাজ্যপাল৷ নিহত বিজেপি কর্মীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে কেঁদেও ফেলেন রাজ্যপাল৷ তিনি বলেন, 'বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে ভিক্ষে চাইতে হচ্ছে৷ আমরা কোথায় এসে পৌঁছেছি? আমি লজ্জিত৷ '
ক্ষুব্ধ রাজ্য়পাল এর পর বলেন, 'বাড়িতে বোমা মেরে ধ্বংস করা হচ্ছে৷ পুলিশ, প্রশাসন কেউ আসছে না, আমরা কোথায় যাচ্ছি? কল্পনাও করতে পারছি না যে স্বাধীনতার পর ভারতে এমন দৃশ্য দেখতে হবে৷ এক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে এসেছি৷ ভোট দেওয়ার জন্য মানুষকে এভাবে মাশুল দিতে হবে? মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি, রাজ্যে করোনা যত বড় সমস্যা, সেরকমই নির্বাচন পরবর্তী হিংসাও বড় সমস্যা৷ মুখ্যমন্ত্রী দয়া করে নজর দিন৷ যেখানেই যাচ্ছি, বলছে মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন৷ যাঁরা আছেন তাঁদের হয় মাথা ফেটে গিয়েছে, নাহলে তাঁরা আহত৷ এই ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখতে হবে ভাবিনি৷ অন্তত এক লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া৷ এটা কেমন ব্যবস্থা? কিছু কিছু মানুষের পুলিশ, প্রশাসন কারও ভয় নেই৷ আর কিছু মানুষ পুলিশ, প্রশাসনের ভয়ে ঘুমোতে পারছে না৷'
এ দিন প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা নন্দীগ্রামে ছিলেন রাজ্যপাল৷ নন্দীগ্রামের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখার পর মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে রাজ্যপাল বলেন, 'মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের প্রধান সেবক হিসেবে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি৷ করোনার সঙ্গে যেমন লড়ছেন, সেরকম ভোট পরবর্তী হিংসা বন্ধ করতে উদ্যোগী হোন৷ লাখো মানুষের দুঃখ বুঝুন, যন্ত্রণা বুঝুন৷ এত ভোট পরবর্তী হিংসা ভারতে কখনও দেখা যায়নি৷ ভোটে নিজের পছন্দ অনুযায়ী ভোট দেওয়ার কারণেই এত হিংসা? এখনও পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া, পুনর্বাসন দেওয়ার জন্য উনি কী পদক্ষেপ করেছেন? আমার নজরে পড়েনি৷ যাঁরা অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা তো নিন৷
পশ্চিমবঙ্গের এই অবস্থা দেখে আমার হৃদয় কাঁপে! হাতজোড় করে বলছি এই তাণ্ডবনৃত্য বন্ধ হওয়া দরকার৷ এখনও আপনি কিছু করেননি৷ সবকিছু উপেক্ষা করেছেন৷ সরকারি মদতপুষ্ট এই সন্ত্রাস বন্ধ করতে উদ্যোগী হোন৷' মুখ্যমন্ত্রী শীতলকুচি কাণ্ডকে যেভাবে গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন, তৎকালীন এসপি-কে সরিয়ে দিয়েছেন, এ দিন সেই প্রসঙ্গ তুলেও সরব হন রাজ্যপাল৷ নন্দীগ্রাম ছাড়ার আগে জানকীনাথ মন্দিরেও পুজো দেন তিনি৷
যদিও রাজ্যপালের এই সফরকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল৷ জেলা তৃণমূল সভাপতি এবং রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র দাবি করেন, রাজ্যপালকে নন্দীগ্রামের অধিকাংশ মানুষই এড়িয়ে গিয়েছেন৷ তিনি এসেছেন স্বাগত৷ উনি কেঁদেছেন বা ওনার সামনে কেউ কান্নাকাটি করেছেন এমন খবর আমার কাছে নেই৷ ওনার কাছে মানুষ আবেদন করেছে কি না জানা নেই, ওনাকে সবাই এড়িয়ে চলেছেন বলে খবর৷ দু' চারজন লোককে নিয়ে ঘুরছেন৷' তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও রাজ্যপালের নন্দীগ্রাম সফরকে কটাক্ষ করে বলেছেন, 'গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল!'
Sujit Bhoumikনিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Jagdeep Dhankhar, Mamata Banerjee, Nandigram