#বীরভূম: বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, পাশাপাশি বেড়ে চলেছে মৃত্যুর সংখ্যাও। আর এই কোরনা ভাইরাসের কারণে হেতমপুর রাজবাড়ি শতাব্দী প্রাচীন রথ ইংল্যান্ড থেকে আসার পর এই প্রথম রথের চাকা গড়াবে না হেতমপুর গ্রামে। হেতমপুর রাজবাড়ির পাশেই রয়েছে গৌরাঙ্গ মন্দির যেটি রাজাদের তৈরি। জানা যায় মহারাজা রামরঞ্জন চক্রবর্তীর স্ত্রী মহারানী পদ্ম সুন্দরী দেবী এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত করেন। আর এই গৌরাঙ্গকে গ্রাম ঘোরাবার জন্যই এই রথ আনা হয়েছিল সুদূর ইংল্যান্ড থেকে। এই রথে গৌরাঙ্গ সঙ্গে থাকতেন বলরাম ও অদ্বৈত মহারাজ। এই রথ গৌরাঙ্গ মন্দির থেকে বের হয়ে রাজবাড়ি প্রবেশ করে। গোটা হেতমপুর গ্রাম পরিক্রমা করে হাতি তলা পেরিয়ে পুরনো রাজবাড়ির কাছে রাধাবল্লভ মন্দিরে যেত। এই রথ দেখতে দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ ছুটে আসতো। বসতো একদিনের গ্রাম্য মেলাও।
গৌড়ীয় সমিতির সম্পাদক ভক্তি বারিডি ত্রিদন্ডী মহারাজ জানান, রাজবাড়ির আর্থিক অবস্থা খারাপের জন্য ২০০৭ সালে কুমার মাধবি রঞ্জন চক্রবর্তী ও সুরঞ্জন চক্রবর্তী গৌরাঙ্গ মন্দিরটি গৌরাঙ্গ মঠের হাতে তুলে দেন। কারণ সেই সময় তাদের পুজো চালানোর মত ক্ষমতা ছিল না। তাই পুজো যাতে বন্ধ না হয়ে যায় সেই জন্য গৌরাঙ্গ মঠের হাতে তুলে দেন। গৌরাঙ্গ মঠের সম্পাদক আরও জানান, যেভাবে করোনা ভাইরাস দিন দিন বেড়ে চলেছে মানুষের সুরক্ষার কথা ভেবে বেশ কিছুদিন আগে গৌরাঙ্গ মঠের পক্ষ থেকে একটা মিটিং করে দুবরাজপুর থানায় লিখিত ভাবে জানিয়ে দেন যে তারা এবার রথযাত্রার কোনও অনুষ্ঠান করবেন না এবং যে গ্রাম্য মেলা বসে সেটিও এবার তারা বসাবে না। তবে রথ উপলক্ষে স্নান যাত্রা, নেত্র উৎসব এমনকি রথের দিনে যে অনুষ্ঠান গুলি থাকে বা পুজো আচ্ছা থাকে সেগুলি হবে সরকারের নিয়ম মেনে, শুধুমাত্র মঠের সন্ন্যাসীরা থাকবেন।
অন্যদিকে এবার রাজবাড়ির রথের পালি সুরঞ্জন চক্রবর্তীর। সুরঞ্জন চক্রবর্তীর পক্ষে দেবাশীষ মুখার্জী জানান, রাজবাড়ির এই রথটি ব্রজবালা ট্রাস্টের। যদিও তাদের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে এবারে করোনা ভাইরাস এর জন্য এবারই প্রথম রথের চাকা গ্রাম ঘুরবেনা।
হেতমপুর গ্রামে রথের চাকা যে ঘুরবে না তা জেনে গ্রামের মানুষের মন ভাল নেই। এই দিনটির জন্য মানুষ অপেক্ষা করতো। প্রত্যেক বছর এই সময়ে রথ পরিষ্কার করার কাজ চলে জোরকদমে কিন্তু এবারে দেখা গেল উল্টো ছবি। রথের চাকা ঘুরবে না বলে এবার রথও পরিষ্কার হয়নি। রাজবাড়িতে গতবছর রথ যাত্রার পর রথটি যে অবস্থাতেই রাখা হয়েছিল সেই অবস্থাতেই এবছর দাঁড়িয়ে আছে। মন ভাল নেই রথেরও কারণ রথের চাকা ঘুরবে না বলে তাকেও এবার কেউ পরিষ্কার করেনি।
শতাব্দী প্রাচীন পিতলের রথ নিয়ে আসা হয়েছিল ইংল্যান্ড থেকে। ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট কোম্পানির এই রথ। এক সময় ঘোড়ায় টানত এই রথ তবে এখন মানুষের টানে। এই রথ ছিল অত্যাধুনিক। যার স্টিয়ারিং, ব্রেক, সকার অর্থাৎ গাড়ির যেমন পাতি থাকে তা সবই আজও রয়েছে।
Supratim Das