হুগলি: ২৮ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন মা। বহু খোঁজাখুঁজির পরও মায়ের সন্ধান পাচ্ছিলেন না ছেলে। অবশেষে চুঁচুড়ার এক পুলিশকর্মী এক অপরিচিত বৃদ্ধার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করাতে মায়ের খবর পৌঁছয় তাঁর ছেলের কাছে।
শনিবার সকালে চুঁচুড়ার পুলিশ আবাসন থেকে এসে ৯০ বছরের বৃদ্ধ মাকে বাড়ি নিয়ে যায় তাঁর ছেলে। গুড়াপ থানার খরুয়া গ্রামের বাসিন্দা খেদিবালা ভূমিজের বয়স প্রায় নব্বই। হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর ছেলে একেবারে প্রান্তিক মানুষ। মা নিখোঁজের পর কয়েক দিন খোঁজাখুঁজি করেন কিন্তু কোনো সন্ধান পাননি।
আরও পড়ুন- রাতে ঘরে একা পেয়ে মহিলাকে একি করল যুবক! আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি
হুগলি সদর চুঁচুড়া শহরের ঘড়ির মোড়, কোর্টের ধারে ভবঘুরের মতো ঘোরাঘুরি করতেন। যে যা দিত খেতেন। আবার গাছতলায় শুয়ে পড়তেন বৃদ্ধা। দিন তিনেক আগে সন্ধায় আমরাতলা আবাসনে ঢুকে গাছের পাতা কুড়িয়ে জড়ো করছিলেন।
আবাসনের বাসিন্দা পুলিশ কর্মী সুকুমার উপাধ্যায় বৃদ্ধাকে দেখতে পান। তাঁকে ডেকে নাম জিজ্ঞাসা করেন। বৃদ্ধার কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন ছিল সেসময়। পোষাক ছিল অপরিষ্কার। আবাসনের অন্য বাসিন্দারা বৃদ্ধাকে খাবার দেন। রাতে শীত পোশাক চাদর দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেন
আবাসিকের মহিলারা তাঁকে ভাল করে সাবান দিয়ে স্নান করিয়ে দেন। বৃদ্ধার বাড়ি কোথায় কে কে আছে জিজ্ঞাসা করলে কখনো বলেন বাঁকুড়া, কখনো বলেন বৈঁচি। সঠিক কোনো ঠিকানা পাওয়া যায় না।
সুকুমারবাবু বৃদ্ধার ছবি ফেসবুকে দিয়ে তাঁর পরিবারের সন্ধান পেলে যোগাযোগ করতে বলেন। ধনিয়াখালীর এক ব্যক্তি যিনি চুঁচুড়া আদালতে কাজ করে, তিনি ফেসবুকে বৃদ্ধার ছবি দেখে চিনতে পারেন।
সুকুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বৃদ্ধার বাড়ির ঠিকানা দেন। সুকুমার গুড়াপ থানায় তার এক সহকর্মীকে খোঁজ নিতে বলেন। সন্ধান মেলে বৃদ্ধার ছেলে সুরেনের।
আরও পড়ুন- 'গরিব বলে পেন্সিল বক্স কিনতে পারেনি বাবা',পড়ুয়াদের মনের কথায় নির্বাক শিক্ষকরা
শনিবার চুঁচুড়ায় সেই আবাসন থেকে মাকে নিয়ে ২৩ নম্বর বাসে করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান ছেলে। আবাসনের বাসিন্দারা তাঁঁর মাকে যেভাবে যত্ন করেছেন তার জন্য কৃতজ্ঞ সুরেন।
পুলিশ কর্মীদের পরিবার যাওয়ার আগে বৃদ্ধাকে কিছু টাকা, খাবার, জামা কাপড় দিয়ে দেন। সুকুমার, তাঁর সহকর্মী বরুণ ঘোষ সহ আবাসনের মানুষদের ব্যবহারে আপ্লুত বৃদ্ধাও।
ছেলেকে অনেক দিন পর দেখে তার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন, "আমার ছেলে"। মাকে পেয়ে সুরেনের তখন চোখের কোন চিক চিক করে ওঠে।
রাহী হালদার
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Hooghly, Social Media