#আউশগ্রাম: শতবর্ষ আগেই জাতপাতের লক্ষণরেখা মুছে ফেলতে পেরেছে এই দূর গাঁয়ের দুর্গা। একটা সময় ব্রাহ্মণ পরিবারের অন্দরে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল তথাকথিত নিচু জাতের সদস্যদের। তাদের জন্য বাহির মহলেই টানা থাকতো অদৃশ্য লক্ষ্মণ রেখা। পুজোর কাজে তাঁদের অংশগ্রহণ ভাবনারও বাইরে ছিল। সেই তথাকথিত সভ্য বাংলার সংস্কার থেকে বেরিয়ে পুঁথিগত শিক্ষার আলো না পৌঁছনো বর্ধমানের জঙ্গলমহল কিন্তু সেই লক্ষ্মণরেখা মুছতে পেরেছিল শতবর্ষ আগেই। সেখানে নিচু জাতের স্পর্শ ছাড়া পুজো সম্পূর্ণ হয়না সেই সেদিন থেকেই।
আউশগ্রামের জঙ্গলমহলে মিলন মেলায় সবাইকে মিলিয়ে মিশিয়ে দশমী নিশিতে দেবীকুন্ডে অবগাহন করেন মা দুর্গা।জঙ্গলময় আউশগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রাম উত্তর রামনগর।একশো ছাব্বিশ বছর আগে বীরভূমের আদিত্যপুর থেকে জমিদারি প্রাপ্তির সূত্র ধরে এই গ্রামে আসে চট্টোপাধ্যায় পরিবার।
চার হাজার বছর আগে ধ্বংস প্রাপ্ত সভ্যতা আজকের পান্ডুরাজার ঢিবির নিচে বসবাসকারী দরিদ্রতম আদিবাসী থেকে শুরু করে খোট্টাদরিয়াপুরের মুসলিম বা দেবীপুরের বেদেমাল সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা তখন রয়েছেন মিলেমিশে। এখানের বাসিন্দারা শান্তিপ্রিয়, কলহবিমুখ এবং বেশিরভাগই ধর্ম নিরপেক্ষ। স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দিকে বন্ধুত্বের হাতই বাড়িয়ে দিয়েছিল এখানের এই আদি বাসিন্দারা। কালাচাঁদ চট্টোপাধ্যায় ও কিরনচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জমিদারি কেনার পর টিনের ছাউনির মন্ডপ তৈরি করে দুর্গাপুজো শুরু করেন।
শুরুর সে দিন থেকেই পুজো মন্ডপ সকলের জন্যই উন্মুক্ত। এখানে পুজো হয় পারিবারিক পুঁথি পড়ে। সপ্তমীতে সাত, অষ্টমীতে আট ও নবমীতে ন রকম ভাজা ভোগ নিবেদন করা হয়। কিছুদিন আগেও দশমীতে কাহারদের সকলকে এক কুইন্টাল চালের ভোগ রেঁধে মন্দির চত্ত্বরে বসিয়ে খাওয়ানো হতো। তবে দশমীর সিন্দুর খেলার পর আজও দেবী ভাসানে যান কাহারদের কাঁধে চেপেই। দেবীকুন্ডের মাঠে যান দেবী। আশপাশের বনেদি বাড়ির প্রতিমাও জমায়েত হয় সেখানে। আদিবাসী, ব্রাহ্মন, মুসলিম লাঠিখেলায়, নাচে, আনন্দে উল্লাসে মিলেমিশে একাকার হয়ে যান। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সেই ছবির সামনে একটু একটু করে দেবীকুন্ডে মিলিয়ে যায় একচালার সাবেকি প্রতিমা।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।