হোম /খবর /দক্ষিণবঙ্গ /
পচা জল, গায়ে ঘা, এক সপ্তাহ পরে এভাবেই দিন কাটছে ইয়াস বিধ্বস্ত ভাঙাতুষখালির

পচা জল, গায়ে ঘা, এক সপ্তাহ পরে এভাবেই দিন কাটছে ইয়াস বিধ্বস্ত ভাঙাতুষখালির

জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে সংসার। সেই জলের পাশেই জলের অভাব গ্রামবাসীদের। নদীর জল গ্রামে ঢুকে পচা গন্ধ ছড়িয়েছে।

  • Share this:

#সন্দেশখালি: বিদ্যাধরীর (Bisyadhari River Bengal)জল এখন অনেক শান্ত। দূরে দেখা যায় শান্ত মনে মাছরাঙা বসে আছে। শ্যাওলা ধরা বাঁধের ইঁটগুলো টুপ টুপ করে প্রতিদিন খসে পড়ছে বিদ্যাধরীর শান্ত জলে।  সন্ধে হলে বকুল দিদি আজও শাঁখ বাজায়। কালো ত্রিপলের তলায় সেফটিপিন দিয়ে যত্ন করে আটকানো আছে 'বাবা লোকনাথ' এর ছবি। প্রবাদ আছে রণে, জলে, জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়িবে আমাকে স্মরণ করিবে। "ভগবানকে স্মরণ করেই তো এই যাত্রাটা বেঁচে গেলুম গো। তেড়েফুঁড়ে রাক্ষসের মতো আমাদের দিকে এসেছিল এই বিদ্যাধরী।" ব্যাস ওই যে এসেছিল। তারপর তার আসার চিহ্ন রেখে ফের ইছামতী আর রায়মঙ্গলের সাথে সংসার করছে বিদ্যাধরী। ধামাখালি ফেরি ঘাটে দাঁড়ালে তিন দিক জুড়েই দেখা মিলবে হাজারো ক্ষতের। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস চলে যাওয়ার পরেও সেই ক্ষত দগদগে ঘা'য়ের মতো হয়ে গিয়েছে।

বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে। ফুলে ফেঁপে ওঠা বিদ্যাধরী তার নোনা জল নিয়ে আছড়ে পড়েছিল একাধিক গ্রামে। সেরকমই একটা গ্রাম ভাঙাতুষখালি। গ্রাম এখনও জলমগ্ন। মানে ৪ ফুট জল এখনও দাঁড়িয়ে গ্রামজুড়ে। গ্রামের বাসিন্দারা অবশ্য গ্রামে নেই। এখন মাথা গোঁজার আশ্রয় বলতে বাঁধের ওপরে সরকারি সাহায্যে পাওয়া কালো ত্রিপল। চারিদিকে কাঠ আর ইঁটের গুঁড়ি দিয়ে যে ঘর বাঁধা আছে। সেখানেই মাথা গোঁজার ব্যবস্থা হয়েছে। এখানেই সংসার পেতেছেন আনোয়ারা বিবি। আয়লা দেখেছেন, ফণী, বুলবুল এমনকি আমফান দেখেছেন তবে ঝড়ের এমন চেহারা নাকি তিনি দেখেননি। আনোয়ারা বিবির কথায়, "না দেখিনি তো। নদীর জলের এমন আচরণ দেখিনি। আমি চার, পাঁচটি শাড়ি নিয়ে এসেছি। এক কাপড়ে দিন গুজরান করছি। সরকার থেকে খাবার দিচ্ছে। আর প্যাকেট করে জল দিচ্ছে। ওটাই আমাদের ভরসা।"

জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে সংসার। সেই জলের পাশেই জলের অভাব গ্রামবাসীদের। নদীর জল গ্রামে ঢুকে পচা গন্ধ ছড়িয়েছে। গ্রামের পুকুর ভেসে গিয়েছে। দু'টি টিউবওয়েল ডুবে গিয়েছে। পচা জলেই কাজ করতে গিয়ে এখন চামড়ার অসুখ হয়েছে বিকাশে। বিকাশ সর্দার এই গ্রামেই একটা ছোট দোকানে কাজ করত। সেই কাজ আপাতত নেই৷ তবে শরীর জুড়ে ঘা হয়েছে। বিকাশবাবুর কথায়, "আমার গোটা শরীর জুড়ে ঘা হয়েছে। আসলে রোজ একবার করে চেষ্টা করি,যদি ঘর থেকে কিছু জিনিস বার করে আনতে পারি৷ সেই নোংরা জল ঠেলেই বাড়ি যেতে হচ্ছে। তাই গায়ে ঘা হয়েছে।" অনেকের আবার ডায়েরিয়া হয়েছে। নোংরা জল থেকেই ক্রমশ ছড়াচ্ছে পেটের রোগ। এত কিছুর মাঝেও আশা ছাড়তে রাজি নয় ভাঙাতুষখালির বাসিন্দারা। যেমন ভূপাল বর্মণ বলছেন, "ফি বছর প্রকৃতির রোষ এভাবেই আমাদের সহ্য করতে হয়। তবুও আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।" দিন যায়, সন্ধে নামে। স্তিমিত হয়ে আসে ভুটভুটির আওয়াজ। ত্রাণ শিবির থেকে ভেসে আসে আজান আর শাঁখের আওয়াজ। নতুন সকালে অপেক্ষা থাকে গ্রামের দিকে চেয়ে দেখার, জল কি নামল।

Published by:Pooja Basu
First published:

Tags: Cyclone Yaas, South bengal news