#কলকাতা: সুপার সাইক্লোন আমফান কেড়ে নিয়েছে ওদের ভিটে-মাটি। কেড়ে নিয়েছে ওদের জীবিকা। সব হারিয়ে আজ ওরা বিপন্ন, সহায়হীন। সুন্দরবন, পাথরপ্রতিমার গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে গছে আমফানের তান্ডবে। অসহায় মানুষগুলোর জন্য দিনের শেষে যে পরিমাণ সাহায্য পৌঁছেছে, তাতে পেট ভরে না। জীবনও চলে না।
সব হারানো মানুষগুলোর জন্য মসিহা হয়ে দাঁড়িয়েছে হুগলি জেলার পরিচিত এনজিও 'চুঁচুড়া-আরোগ্য'। বছরভর মানুষের পাশে থাকার কাজ করে এনজিও টি। কারও পড়ার বই নেই, কারও চিকিৎসা হচ্ছে না, কিংবা মেয়ের বিয়ে আটকে আছে! সহায়হীনের অবলম্বন 'চুঁচুড়া-আরোগ্য'। আমফান পরবর্তী পর্যায়ে সুন্দরবন, পাথরপ্রতিমার সব হারানো বিপন্ন মানুষগুলোর জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ছুটে গিয়েছে হুগলি জেলার অতি পরিচিত এনজিওটি।
বঙ্গোপসাগর লাগোয়া দুর্গম এলাকায় পৌঁছতে গঙ্গায় ভাসমান ক্রুজ নর্থ ফ্রন্টিয়ার নাযম্বর থ্রি তে ত্রাণ সামগ্রী বোঝাই করে নিয়ে গিয়েছিলেন ১৪ জনের একটি দল। ভৌগোলিকগত অবস্থান ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সমুদ্রের কোলে ঘোড়ামারা দ্বীপ, রাখালপুর, গোবিন্দপুর, শ্রীধরনগর কিংবা রজবল্লভপুরের মত গ্রাম গুলোতে সাহায্য নিয়ে পৌঁছনোটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। গঙ্গায় ভাসমান ক্রুজে করে যাত্রা শুরুর দিনেও তাই অনিশ্চয়তায় ভেসেছেন ইন্দ্রজিৎ দত্ত, অমিত মল্লিকের মত চুঁচুড়া-আরোগ্যের সদস্যরা।
কারণ যেখানে মহৎ, সেখানে অন্য কিছু বাধা হতে পারেনি। দুর্গত মানুষগুলোর জন্য সাহায্য নিয়ে পৌঁছে যাওয়া গিয়েছে সুন্দরবন, পাথরপ্রতিমায়। দুর্গম গ্রামগুলোর প্রায় ৫ হাজার মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন চাল, ডাল, শুকনো খাবার, ওষুধ, পানীয় জল। ভিটে-মাটি হারানো মানুষগুলোর মাথা গোঁজার জন্য দিয়েছেন ত্রিপল। ৭৫০ শিশুর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নতুন জামা কাপড়। সংস্থার সভাপতি সুজন বন্ধু ঘোষ ও সম্পাদক অমিত মল্লিক বলছিলেন,"মানবিকতার টানে ছুটে আসা। তবে এবার বলে নয়, সাহায্য নিয়ে আবারও আসব। এভাবেই পাশে থাকব ওদের।"
সুন্দরবন, পাথরপ্রতিমার ১৬টি গ্রামে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি অসহায় মানুষগুলোর শারীরিক পরীক্ষা করতে দলের সঙ্গেই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চার জন চিকিৎসক। আমফান পরবর্তী পর্যায়ে জলবাহিত রোগের হাত থেকে মানুষজনকে দূরে রাখতে এলাকায় বিতরণ করা হয় জিওলিন। সাহায্য পেতে দূর-দূরান্ত থেকে নৌকা করে এসেছিলেন শিশু, মহিলারাও। দিনের শেষে তারা ফিরে গিয়েছেন এক টুকরো হাসি মুখে ধরে। আর চুঁচুড়া-আরোগ্য ফিরেছে সব হারানো মানুষগুলোর আশীর্বাদ সঙ্গী করে। শুরু হয়েছে আগামীর পরিকল্পনা।
PARADIP GHOSH