#বর্ধমান: ছেলের জন্য মেয়ের পুজো। এমনই গল্প চালু বর্ধমানের দাস পরিবারে। ব্যবসার কারণে আদি বাড়ি বাঁকুড়া ছেড়ে ঘর বেঁধেছিলেন বর্ধমানের খাজা আনোয়ার বেড় এলাকায়। তাও প্রায় দেড়শ বছরেরও আগে। ব্যবসায়ী থেকে জমিদারি পেতে সময় লাগেনি।
বর্ধমানের দামোদর সংলগ্ন সদরঘাট । এক সময়ের বাণিজ্যনগরী। ব্যবসা করতে বাঁকুড়ার কোতলপুর থেকে বর্ধমানে চলে আসে দাস পরিবার । বর্ধমানের খাজা আনোয়ার বেড় এলাকায় তৈরি হয় বিশাল জমিদারবাড়ি। সেখানেই পুজো শুরু করেন জমিদার ব্রজেন্দ্রলাল দাস। তবে পুজোর শুরুতেই জড়িয়ে নানা গল্প। এই খানে দুর্গা সেই কারণেই হয়তো, ঘরোয়া। মহিষাসুরমর্দিনী নয়, দাস পরিবারে হয় হরগৌরির আরাধনা। স্বামী, ছেলেমেয়ে নিয়ে একেবারে ঘরোয়া মেয়ে।
গল্পটা অবশ্যই ইচ্ছেপূরণের। সে তবে সে ইচ্ছে আগে নাকি পরে পূরণ হয়েছিল তা নিয়ে অবশ্যই ধোঁয়াশা আছে। তবে ছেলে জন্মানোর পর নাম রেখেছিলেন দুর্গাচরণ। তদ্দিনে আরো জাঁক জমক করে হচ্ছে দুর্গা আরাধনা।
পনের ফুট উঁচু কাঠের দরজা। দরজা পেরিয়ে বিশাল দুর্গাদালান। দালান জোড়া কারুকাজ। অনেকটাই আজ ক্ষয়ে গেছে। চারপাশে খিলান। টানা বারান্দা। পরিবারের মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। গোপন পথ ধরে সোজা পৌঁছে যেতেন দোতলার বারান্দায়।
পুজোর পাঁচদিন ঠাকুরদালানে বসত যাত্রার আসর। দোতলার খড়খড়ির আড়ালে আড্ডা মগ্ন থাকতেন মহিলামহল। ভিয়েনে হরেক রকম মিস্টি তৈরির তোড়জোড়। তিনটি আলাদা ভোগঘরে ভোগ রান্না। বিশাল ঝাড়বাতিতে ঝলমলে দুর্গাদালান।
আজো ষোড়শপ্রচারে হয় দুর্গার আরাধনা। তবে বলি এখন বন্ধ। পুজো ঘিরে আজও ছড়িয়ে আছে নানা মিথ। সন্ধিপুজোয় নাকি দুর্গার পাশে দেখা মেলে বিশালাকার এক মথের। পুজোর পর আর দেখা যায় না তাকে। পুজোর সময়ে আকাশে পাক খায় শঙ্খচিল। সে সব গল্পকথা। বা পারিবারিক বিশ্বাস।
সবই আজ ইতিহাস। চুরি হয়ে গেছে ঝাড়লণ্ঠন। ভেঙে গেছে দুর্গাদালানের অনেকাংশ। জামকজমকে টান পড়েছে। তবু পুজোর কদিন পরিবারের সদস্য, বন্ধু , পাড়া প্রতিবেশীদের ভিড়ে যেন জীবন ফিরে পায় বর্ধমানের দাসবাড়ি।