কলকাতা: গায়ে মাঘের শীত। সাত সকালে লঞ্চে চেপে মরিচঝাঁপি চলল বিজেপি। ৪৩ বছর আগে মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুদের শহিদ হওয়ার ঘটনাকে স্মরণ করতে গতকাল মরিচঝাঁপিতে শহিদ স্মরণ করল বিজপি এসসি মোর্চা৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা ভোটের আগে, উদ্বাস্তু হিন্দু ভোটকে নজরে রেখেই বিজেপির এই উদ্যোগ।
রাজ্যের তপশিলি জাতি ও উপজাতি সংরক্ষিত ৮৪টি আসনে উদ্বাস্তু ভোটের প্রভাব রয়ছে। ১৯- এর লোকসভা ভোটের তুলনায় ২১- এর বিধানসভা ভোটে এই আসনগুলিতে শক্তিক্ষয় হয়েছে বিজেপির। ১৯- এর লোকসভা ভোটে এই আসনগুলির মধ্যে ৪৬টিতে বিজেপি জিতলেও, একুশের ভোটে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯-এ ।
আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় বাম-কংগ্রেস জোটের জট কাটানোর দায় মানিকের উপরেই, নজর রাখছে বিজেপি
তপশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত ৬৬টি আসনের মধ্যে একুশের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ৩৬, বিজেপি ৩০টি আসন জিতেছিল। এরই মধ্যে নাগরিকত্ব ইস্যুতে সিএএ, এনআরসি নিয়ে দোলাচলের কারণে হিন্দু উদ্বাস্তু ভোট নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বিজেপির। এই আবহেই আজ রাজ্য বিজেপির তপশিলি জাতি মোর্চার উদ্যোগে মরিচঝাঁপি অভিযান।
মরিচঝাঁপি কর্মসূচিকে সামনে রেখে একদিকে সিপিএম অন্যদিকে তৃণমূল, দুই দলকেই নিশানা করেছে বিজেপি। মোর্চার রাজ্য সভাপতি সুদীপ দাস ও রাজ্য নেতা দেবজিৎ সরকারের মতে, মরিচঝাঁপির 'গণহত্যা'র জন্য দায়ী বামেরা। আর, সেই গণহত্যার বিচার না করার জন্য দায়ী বর্তমান তৃণমূল সরকার। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর মরিচঝাঁপি সহ বাম জামানার 'অবিচারের' শাস্তি দিতে একাধিক তদন্ত কমিশন হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। এর জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করেছে বিজেপি। সেই দাবিতেই আরও একবার সরব হতে রাজ্য বিজেপির মরিচঝাঁপি অভিযানের পরিকল্পনা।
মরিচঝাঁপির কর্মসূচি - কলকাতার সায়েন্স সিটি থেকে রাজ্যস্তরের নেতারা সড়কপথে পৌঁছন দক্ষ্মিণ ২৪ পরগণার গদখালি। সেখান থেকে সুসজ্জিত ৮ টি লঞ্চে চেপে কুমীরমারি। কুমীরমারির বাগনাপাড়া এলাকায় শহিদ স্মরণ ও সভা হয়। সভা শেষে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে গণভোজ। পরে, কুমীরমারির ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থিত মরিচঝাঁপি দ্বীপে গিয়ে সেখানে দলীয় পতকা উত্তোলন ও শহিদ প্রণাম। এবং শেষে কলকাতা ফেরা।
আরও পড়ুন: ২৮ বছরের চাকরিতে ১৮টি পদক! হাবিলদার থেকে অফিসার হওয়া গোপালের হাতেই খুন মন্ত্রী
এদিকে, দলের এসসি মোর্চার এই কর্মসূচি নিয়ে দলের মধ্যেই সমালোচনা শুরু হয়েছে। দলের একাংশের মতে, মরিচঝাঁপির হিন্দু উদ্বাস্তু শহিদদের স্মরণ করতে গদখালি থেকে সাত সকালে সুসজ্জিত লঞ্চে হৈ হৈ করে চেপে বসলেন বিজেপি নেতা নেত্রীরা। মাঘের শেষ সকালে নদীর হাওয়ায় লঞ্চে চেপে এই জলবিহারের ছবিতে শহিদ স্মরণের মতো কর্মসূচি করতে যাওয়া নেতাদের মধ্যে কোথাও যেন একটা পিকনিক পিকনিক ভাব। এই কর্মসূচির সঙ্গে তা যেন কিছুটা বেমানান।
বিজেপি-র দাবি, ১৯৭৯ সালের ৩১ জানুয়ারি, জ্যোতি বসুর নেতৃত্বাধীন বাম জামানায় সুন্দরবনের এই প্রত্যন্ত দ্বীপে রাজ্য পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে মারা গিয়েছিলেন প্রায় ২ হাজার মানুষ। সেই থেকেই ৩১ জানুয়ারি 'মরিচঝাঁপি দিবস' পালন বিজেপির উদ্বাস্তু রাজনীতির অন্যতম হাতিয়ার।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: BJP