#বীরভূম: মুক্ত কী জিনিস, তা কারোর অজানা নয়। এই মুক্তও চাষ করা হয়। এবং সেই চাষ করা মুক্ত, বাজারে বিক্রি করা হয়, তাও জানেন সকলে। কিন্তু অনেকেই জানেন না, এই মুক্ত খুব সহজ পদ্ধতিতে চাষ করা যায় এবং চাষ করার জন্য খরচ হয় সামান্য। অথচ এই মুক্ত চাষ করে তা বাজারে বিপুল অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করা হয়ে থাকে। বলা যেতে পারে, সহজ পদ্ধতিতে লাভজনক ব্যবসা হলো মুক্ত চাষ। সহজ পদ্ধতিতে এই লাভজনক ব্যবসা করেই রোজগারের দিশা দেখাচ্ছেন বীরভূমের মীর মতিউর রহমান।
বীরভূমের বোলপুরের সিয়ানের বাসিন্দা মীর মতিউর রহমান। তিনি এই মুক্ত চাষ সম্পর্কে জানতে পারেন যে, বহু মানুষ হায়দ্রাবাদ, কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় মুক্ত চাষ করে মোটা টাকা রোজগার করছেন। এর পরেই তাঁর মধ্যে কৌতূহল বাড়ে মুক্ত চাষ নিয়ে। তিনি চিন্তাভাবনা শুরু করেন, যদি মুক্ত চাষ করা হয়ে থাকে তাহলে তিনিও মোটা অংকের টাকা রোজগার করতে পারবেন। এর পরই শুরু হয় তাঁর প্রয়াস। ইউটিউব দেখে অল্প সময়ের জন্য ট্রেনিং নিয়ে শুরু করে দেন এই মুক্ত চাষ।
মুক্ত চাষ করার জন্য আলাদা করে কোনও জলাশয় তৈরি করার প্রয়োজন নেই। এলাকায় যে সকল অব্যবহৃত পুকুর অথবা ডোবা রয়েছে, সেগুলিতেই অনায়াসে মুক্ত চাষ করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন মতিউর রহমান। তবে তা সত্ত্বেও অন্যান্য জায়গায় মুক্ত চাষ করা হয়ে থাকলেও, বীরভূমে খুব একটা মুক্ত চাষ নেই বললেই চলে। অন্যদিকে মতিউর রহমান নিজে এমন চাষ শুরু করেছেন এমনটা নয়, এর পাশাপাশি তিনি এই মুক্ত চাষে অন্যান্যদেরও আগ্রহী করে তোলার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছেন।
মতিউর রহমান জানিয়েছেন, "আমাদের আশপাশের যে সকল পুকুর রয়েছে সেই সব পুকুরে অনায়াসে এই মুক্ত চাষ করা যেতে পারে। এর জন্য খুব একটা পরিশ্রম করতে হয়, এমনটা নয়।" মুক্ত চাষ শুরু করার পরিপ্রেক্ষিতে মতিউরবাবু গ্রামের বিভিন্ন জেলে এবং ছেলেদের থেকে প্রথমে ঝিনুক সংগ্রহ করে নেন। তারপর সেই সকল ঝিনুক অপারেশন করে তাদের মধ্যে মুক্ত তৈরির ছাঁচ প্রবেশ করান। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই অপারেশন করতে হয় যাতে ঝিনুকগুলো মারা না যায়। এরপর সেগুলিকে জলে ছেড়ে দিতে হয়।
আরও পড়ুন- পল্লবী ও সাগ্নিকের মধ্যে উঠে এল তৃতীয় ব্যক্তির নাম! চাঞ্চল্যকর দাবি অভিনেত্রীর পরিবারের
বিভিন্ন ধরনের মুক্তর মধ্যে মতিউর বাবু আপাতত ডিজাইন মুক্ত তৈরি করার পথ বেছে নিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, ডিজাইন মুক্ত তৈরি হওয়ার জন্য ছয় থেকে আট মাস সময় লাগে। অন্যদিকে, গোল মুক্ত তৈরি হতে সময় লাগে দু'বছর। বাজারে মুক্তর বিপুল দাম থাকলেও ঝিনুক সংগ্রহ করা এবং সেগুলির মধ্যে ছাঁচ বসানো ইত্যাদির ক্ষেত্রে খুব একটা ব্যয় অথবা পরিশ্রম হয় না। কেবলমাত্র ধৈর্য ধরে পরিচর্যা করলেই লাভের মুখ দেখা যায়।
কীভাবে ডিজাইন মুক্ত তৈরি করা হয়?
জেলেদের থেকে ঝিনুক কেনার পর সেই ঝিনুক অপারেশন করা হয়। অপারেশন করার সময় ঝিনুকের জিভের তলায় মুক্তর ছাঁচ বসিয়ে দেওয়া হয়। আসলে এই ছাঁচ বসিয়ে দেওয়ার পর ঝিনুকের মধ্যে অস্বস্তি হয়। তখন তারা ওই ছাঁচের ওপর লালা ফেলতে শুরু করে। এইভাবে প্রতিনিয়ত লালা ফেলতে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে ওই ছাঁচটি আট মাস পর একটি পরিপূর্ণ রূপ পায়। তারপর সেই মুক্ত বাজারে বিক্রি হয়।
দাম এবং খরচ সম্পর্কে জানা গিয়েছে, এই ধরনের ডিজাইন মুক্ত, চাষ করার ক্ষেত্রে ঝিনুক কেনা, ছাঁচ আমদানি করা এবং অন্যান্য পরিচর্যা সহ আনুমানিক ২০ টাকা খরচ হয়ে থাকে। আট মাস পর তা পাইকারি বাজারে বিক্রি করা হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। কোনও কোনও ডিজাইনের ক্ষেত্রে যেমন খরচ বৃদ্ধি পায়, ঠিক তেমনি আবার বিক্রির দামও অনেক বেড়ে যায়।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Birbhum