#পূর্ব বর্ধমান: মিলছে না বকেয়া পাওনা ৪২ লক্ষ টাকা। প্রশাসন ও সিডিপিও-র দৃষ্টি আকর্ষণ করেও মেলেনি বকেয়া টাকা। শেষ পর্যন্ত 'বিদ্রোহ’ ঘোষণা করলেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের ৫৩৪ টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা। সেই বিদ্রোহের জেরে বন্ধ হয়ে গেল অঙ্গওয়াড়ি কেন্দ্রে পুষ্টিদায়ক খাবার রান্না। পুষ্টিদায়ক খাবার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হলেন প্রায় হাজার খানেক শিশু, গর্ভবতী ও প্রসূতি। 'অরন্ধন’ পরিস্থিতি কাটিয়ে ফের কবে থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিশু, গর্ভবতী ও প্রসূতিরা পুষ্টিদায়ক রান্না খাবার পাবেন? স্পষ্ট করে এর উত্তর দিতে পারছেন না প্রকল্প আধিকারিক। পাশাপাশি এ নিয়ে কিছুই বলতে পারছেন না অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিক্ষিকা ও কর্মীরা। ইতিমধ্যেই এই বিষয়টি জেলা প্রশাসন মহলেও শোরগোল ফেলে দিয়েছে। (Bangla News)
জামালপুরের বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গিয়ে এদিন দেখা যায়, সেখানকার দরজার সামনে নানা সমস্যার কথা লেখা কাগজ সাঁটানো রয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে ,“তাঁরা গত দু’মাস নিজেরা অর্থ খরচ করে আনাজ, জ্বালানী, ডিম ও সবজি কিনে সেন্টার চালিয়েছেন। সেই অর্থ পাওয়ার জন্যে ইতিপূর্বে ব্লকের বিডিও ও সিডিপিও স্যারকে জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু বকেয়া টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা কেউ করে দিতে পারেন নি। তাই আর চালাতে না পেরে জামালপুর ব্লকের সমস্ত অঙ্গওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না খাবার তৈরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।" শুধু জামালপুর ব্লকই নয়। দু’মাস ধরে বরাদ্দ টাকা পাচ্ছে না পূর্ব বর্ধমানের অন্য অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিও। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদের কথায়, কোভিড অতিমারির কারণে লকডাউন চলার সময়ে সেন্টারে নাম নথিভুক্ত থাকা প্রতি জনকে এক মাসের শুকনো খাবার দিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। তাতে ছিল দু কেজি চাল , দু কেজি আলু ও ৩০০ গ্রাম মুসুর ডাল।
আরও পড়ুন: ধেয়ে আসছে 'অশনি', কোমর বেঁধে প্রস্তুত NDRF! কোন কোন জেলায় সতর্কতা?
গত অক্টোবর থেকে চাল , ডাল, আলু বা ছোলা না মেলায় চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাচ্চাদের আর তা দেওয়া যায় নি ।এরপর চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে জামালপুর ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গুলিতে রান্না করা খাবার দেওয়া শুরু হয়। তখন চাল ও ডাল থাকলেও ডিম, সবজি সহ যা কিছু কেনার দরকার পড়ে তার জন্য কর্মীরাই অর্থ খরচ করে। এই ভাবে দু’মাস চালানোর পরেও পাওনা অর্থ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিতই রয়েছেন তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ব্লকের বিডিও ও সিডিপিও কেও লিখিত ভাবে জানান। জানা গিয়েছে, শিশু প্রতি ডিম ও আনাজের জন্যে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা হাতে পান পাঁচ টাকা ৩৬ পয়সা। গর্ভবতী ও প্রসূতিদের জন্যে মেলে ছয় টাকা ৩৫ পয়সা। এছাড়া খিচুড়ির দিন শিশুদের জন্যে ছয় টাকা ২০ পয়সা আর মায়েদের জন্যে সাত টাকা ৪১ পয়সা পেয়ে থাকেন কর্মীরা। এর বাইরে জ্বালানি ও মশলা কেনার জন্যে তাঁরা গড়ে পান ২১ টাকা করে। নির্দেশ মেনে কেন্দ্র গুলিতে সোম, বুধ ও শুক্র ভাত, আলু-ডিমের ঝোল দেওয়া হয়। মঙ্গল-বৃহস্পতি-শনিবার দেওয়া হয় ডিম সেদ্ধ, খিচুড়ি, সোয়াবিন ও সবজি। কর্মীদের ডিম, আনাজ, সোয়াবিন বাজার থেকে কিনে নিতে হয়।
আরও পড়ুন: রাজ্যে চতুর্থ বিমানবন্দর, শীঘ্রই বাণিজ্যিকভাবে উড়ান চালু এই জেলায়!
আইসিডিএস দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সমস্ত খাদ্য সামগ্রী কিনতে গিয়েই গত দু’মাসে জামালপুর ব্লকের ৫৩৪ টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪২ লক্ষ টাকা। জামালপুরের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা বলেন, রান্না করা খাবার দিতে গিয়ে এক-একটি কেন্দ্রের কর্মীরা নিজেদের কয়েক হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। তাঁদের মাইনের প্রায় সবটাই সামগ্রী কিনতে চলে গিয়েছে। আর দু’ মাস ধরে বকেয়া পাওনা টাকা না মেলায় তারা আর চালাতে পারেন নি। সে কারণেই রান্না করা খাবার বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না করা খাবার দেওয়া যে বন্ধ করে দেবে তাঁর জানা ছিল না। বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। জেলাশাসক নিজে বিষয়টি দেখছেন। আশা করছি, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে।
মালবিকা বিশ্বাস
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Bangla News, Purba bardhaman