#কলকাতা: জমি বিতর্কে তাঁর পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন। মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থন তাঁকে সাহস যুগিয়েছে বলে চিঠিতে জানিয়েছেন অমর্ত্য। মুখ্যমন্ত্রীকে 'ডিয়ার মমতা' বলে সম্বোধন করে লেখা ওই চিঠিতে তিনি বলেন, 'আপনার জোরালো কণ্ঠস্বর আমাকে শক্তি যুগিয়েছে। আপনার চিঠি আমাকে শুধু স্পর্শই করেনি বরং বলা ভাল তাতে আমি আশ্বস্ত হয়েছি। আমি খুব খুশি এটা জেনে যে আপনি পাশে আছেন।' লিখেছেন অমর্ত্য সেন।
সম্প্রতি অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকেতনের বাড়ি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। তারপরই বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে সমস্ত রকম ভাবে অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তাঁর পাঠানো চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, জমি বিতর্কের কথা জানতে পেরে আমি বিস্মিত ও আহত। জানান, আপনার লড়াইয়ে আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকের মাঝেই অমর্ত্য সেনের জবাবি চিঠির কথা জানতে পারেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, আমি রাজনীতিগতভাবে ওদের সবচেয়ে বড় টার্গেট। আরও অনেককেই এভাবে টার্গেট করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আশ্রমিকরা তাঁকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন আশঙ্কার কথা। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্র আদর্শ ভুলিয়ে দেওয়ার চক্রান্তের অভিযোগ করেন মমতা বন্দোপাধ্যায়।নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেনের পাশে আগেই দাঁড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তাঁর পাশে দাঁড়ালেন বাংলার বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় অংশ। আগামিকাল, বাংলা অ্যাকাডেমির সামনে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সেই প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গিয়েছে।
মোদী-বিরোধিতার সুর আরও চড়া। শান্তিনিকেতনে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বাড়ি ‘প্রতীচী’-র সীমানায় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিও ঢুকে গিয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফেই এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।এই ঘটনা জেনেই স্বাভাবিকভাবেই বিব্রত নোবেলজয়ী বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ির সীমানার মধ্যেই বিশ্বভারতীর জমি ঢুকে যাওয়ার বিষয়টি তাঁকে কোনওদিনও কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়নি। হঠাৎ করে এই অভিযোগ সামনে আনা হয়েছে। যদিও আইনিভাবেই এই অভিযোগের তিনি মোকাবিলা করবেন বলে জানিয়েছেন।উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে দাবি করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দখল করে রেখেছেন অনেকেই, যে তালিকায় রয়েছেন অমর্ত্য সেনও। যা নিয়ে শুরু হয় জোর বিতর্ক।
বিশ্বভারতীর একটি অংশ জমি জবরদখল করে রেখে বাড়ি বানানোর অভিযোগ আনা হলেও এখনও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও লিখিত অভিযোগ পাননি বলেই জানান অমর্ত্য সেন। তাঁর জবাব, ‘আমাদের কোনও চিঠি দেয়নি বিশ্বভারতী। কিছু জানাননি উপাচার্য। যার বাড়ি তাঁকে কিছু না জানিয়ে অন্যত্র বলা হচ্ছে, আমি মনে করি এতে খারাপ ইঙ্গিত আছে, যা ঢাকা যাচ্ছে না।’ এদিকে অমর্ত্য সেন ইতিমধ্যেই আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে ভাবছেন। আপাতত তাঁর বাড়ি ‘প্রতীচী’ যে জমির উপর তৈরি সেখানকার লিজ নিয়েও কোনওরকম গন্ডগোল নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে সরব হওয়ার জেরেই তাঁকে এই বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে বলেও ইঙ্গিত অমর্ত্যবাবুর।
শান্তিনিকেতনে ‘প্রতীচী’র জমি নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে, সেই বিষয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে শুক্রবার চিঠি লিখে তাঁর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘বিশ্বভারতীর কিছু নব্য হানাদার সম্প্রতি আপনার পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে’।নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে লেখা চিঠিতে তাঁকে ‘সম্মাননীয় অমর্ত্যদা’ বলে সম্বোধন করেছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘অনুগ্রহ করে এ দেশের আধিপত্যবাদ এবং অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লড়াইতে আমাকে আপনার বোন এবং বন্ধু হিসেবে গণ্য করুন’।