হোম /খবর /দক্ষিণবঙ্গ /
মৃত্যুর মিছিল দেখতে হয়েছে, বাজ পড়ার শব্দ শুনে ভয় বুক কাঁপছে নওদার বাসিন্দাদের

মৃত্যুর মিছিল দেখতে হয়েছে, বাজ পড়ার শব্দ শুনে ভয় বুক কাঁপছে নওদার বাসিন্দাদের

বাজের শব্দে কাঁপছে নওদা।

বাজের শব্দে কাঁপছে নওদা।

প্রতিদিন এখনও দুপুর হলেই গ্রামে শুরু হয়ে যাচ্ছে ঝড় বৃষ্টি। আর মাঝে মাঝেই বজ্রপাতের ঘটনা। আর তাতেই বুক কাঁপছে নওদার ডাঙাপাড়ার।

  • Last Updated :
  • Share this:

#রঘুনাথগঞ্জ: ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে ঘুরে  দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথাগঞ্জের নওদা গ্রাম। গত সোমবার এই গ্রামেই বাজ পড়ে মৃত্যু হয় ছয় জনের। প্রতিদিন এখনও দুপুর হলেই গ্রামে শুরু হয়ে যাচ্ছে ঝড় বৃষ্টি। আর মাঝে মাঝেই বজ্রপাতের ঘটনা। আর তাতেই বুক কাঁপছে নওদার ডাঙাপাড়ার।

নওদা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন সুনীল দাস। পরিবারে স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সংসারে রোজগেরে বলতে তিনিই ছিলেন। কথা ছিল মেয়ের বিয়ে দেবেন শীঘ্রই। এর আগে মেয়ের বিয়ে ঠিক হলেও অর্থের অভাবে তা বানচাল হয়ে যায়। এবার আর যাতে তেমন সমস্যায় পড়তে না হয় তাই হাজারো কষ্ট হলেও মাঠেই ছুটে যেতে হত সুনীলবাবুকে৷ ছোট একচালার বাড়ি। বাড়ির উঠোনে ভিড় করে বসে আছেন আত্মীয়রা। সকলের একটাই প্রশ্ন, এত বছর ধরে মাঠে গিয়ে কাজ করেন তারা। সেদিন কেন তারা বুঝে উঠতে পারলেন না বড় বিপদ ঘনিয়ে আসছে! সুনীলবাবুর কাকা রুকময় দাস বলছিলেন, "সেদিন আমরা এক সাথেই মাঠে ছিলাম। দুপুর ১'টা থেকে প্রচন্ড মেঘ ডাকতে শুরু করে। অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা সবাই ডিপ টিউবওয়েলের ঘরের দিকে দৌড় লাগিয়েছিলাম।  বৃষ্টি থামার পরে দেখতে পাই মাঠের মধ্যে সুনীলের দেহ পড়ে আছে।"এখন পরিবারের একটাই চিন্তা এই টানাটানির সংসার চালাবে কে? প্রশাসনের তরফ থেকে সাহায্য মিললেও চিন্তায় আছেন আগামী দিনের কথা ভেবে।

গ্রামের অপর বাসিন্দা দূর্যোধন দাস। স্ত্রী, দুই সন্তান, মা-বাবা নিয়ে সংসার। অন্যের জমিতে ধান চাষ করে সংসার চলে। এক ছেলে পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে। মেয়ে পড়ে চতুর্থ শ্রেণীতে। সোমবার মা আহ্লাদী দাসের সাথেই গিয়েছিলেন মাঠে। আহ্লাদীদেবী জানাচ্ছেন, "সেদিন মাঠের অন্য দিকে আমরা কাজ করছিলাম৷ পর পর বাজ পড়ছিল। অত বড় বিপদ আমার বাড়িতে হয়ে যাবে তা আমি বুঝে উঠতে পারিনি। আমার সব শেষ হয়ে গেল। এখন সরকারের কাছে আমার একটাই আবেদন পরিবারটাকে রক্ষা করুক।"

নিজেদের জমিও নেই৷ সংসার রক্ষা নিয়ে চিন্তিত তারা।একই অবস্থা গ্রামের বাসিন্দা সূর্য কর্মকারের বাড়ির। দিন আনা দিন খাই পরিবার তাদের। বাবা, মা, স্ত্রী ও ১১ মাসের সন্তানের অন্নের ব্যবস্থা করতেন সূর্য কর্মকার। তার মা জয়তারা দেবী জানাচ্ছেন, "সেদিন বারবার বলেছিলাম মাঠে না যেতে। কিন্তু আমাদের গরিবের সংসার। একদিন কাজ না করলে কি আর পেট ভরে৷ তাই বাধ্য হয়ে কাজ করতে যেতে হয়েছিল। এবার সব শেষ হয়ে গেল।"গ্রামের কোণায় কোণায় কান্নার রোল। মানুষ বুঝে উঠতে পারছেন না তাদের ভুল কোথায়। অন্যের জমিতে কাজ করেই সংসার চলে৷ রোজ রোজ প্রাকৃতিক দূর্যোগ। তাহলে কি তাদের মাঠে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে এই বর্ষায়। চিন্তায় নওদার বাসিন্দারা।

Published by:Arka Deb
First published:

Tags: Thunderstorm