#পটাশপুর, পূর্ব মেদিনীপুর: পঁচেটগড় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রাচীণ রাজবাড়ীর অন্যতম। সঙ্গীত নাটক সাহিত্য প্রভৃতি শিল্পকলায় সারা বাংলা আলাদা স্থান লাভ করেছে এই রাজবাড়ি। প্রায় সাড়ে চারশো বছরের বেশি সময়ের ইতিহাস বুকে নিয়ে এখনও স্ব-মহিমায়। রাজবাড়ীর ইতিহাসে জড়িয়ে আছে মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব থেকে ভারতের প্রখ্যাত সঙ্গীত যদু ভট্ট বা যদুনাথ ভট্টাচার্যের কাহিনী। কিন্তু জানেন কি এই পঁচেটগড় রাজবাড়ি গড়ে ওঠার ইতিহাস? একজন বিখ্যাত সেতার বাদক থেকে কীভাবে রাজত্ব স্থাপন করলেন। আসুন জেনে নেওয়া পঁচেটগড় রাজবাড়ি ঐতিহ্যবাহী সেই ইতিহাস। যে ইতিহাসে জুড়ে গেছেন ভারতের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ যদু ভট্ট।
রাজবাড়ির গুগল লোকেশন:-
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুর ২ নম্বর ব্লকে অবস্থিত পঁচেট গড় রাজবাড়ি। দাস মহাপাত্র পরিবারের এই রাজবাড়ী গড়ে ওঠার পেছনে আছে চমকপ্রদ ইতিহাস। এই রাজবাড়ির পূর্বপুরুষ কালা মুরারিমোহন দাসমহাপাত্র ছিলেন বিখ্যাত সেতার বাদক। তাঁর সেতার বাজানোর খ্যাতি পৌঁছে যায় দিল্লীর মুঘল দরবারে। মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেব তাম্রলিপ্ত বন্দর এর প্রশাসকের কাজ দেন। তার কাজে খুশি হয়ে মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব পটাশপুর পরগনার জায়গীর দান করেন। শিবের উপাসক এই দাস মহাপাত্র বংশের পূর্ব পুরুষরা। স্থাপন করে পঞ্চ শিবের মন্দির।
পঞ্চ শিবের মন্দির স্থাপন এর পেছনে কাহিনী আরও চমকপ্রদ। এলাকায় অনেক গো চারণ ক্ষেত্র ছিল। দেখা যায় অনেক গরু গোচারণ থেকে ফিরে আসছে না। এক উঁচু ঢিবির ওপর দাঁড়িয়ে অনবরত দুগ্ধ বর্ষণ করছে। সেই ঢিবি পরিষ্কার করতে খোঁজ পাওয়া যায় প্রাচীন শিব মন্দিরের। দাস মহাপাত্র পরিবারের সেখানে তৈরি করে পঞ্চ শিবমন্দির। পঞ্চ শিবমন্দির লোকমুখে পরিবর্তিত হতে হতে আজকে এই পঁচেট গড়। পরে এই রাজপরিবার বৈষ্ণব ধর্মের অনুরাগী হয়। স্থাপিত হয় বর্তমান কুল দেবতা কিশোর রাই জিউর মন্দির।স্থাপত্য শিল্পকলার দিক থেকে বিভিন্ন মন্দির ও বিভিন্ন স্থাপত্য বিভিন্ন স্থাপত্য ঘরানার নিদর্শন পাওয়া যায় পঁচেট গড়ে। বাংলার পঞ্চরত্ন স্থাপত্যকলা থেকে উড়িষ্যার রথ দেউল স্থাপত্য কলা এবং দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্যকলার নিদর্শন পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন স্থাপত্য পাশ্চাত্য রীতির নিদর্শন পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন - উইকএন্ডে দিঘা ট্যুর প্ল্যান করছেন, পর্যটকদের জন্য জারি এক গুচ্ছ নয়া নিয়ম
পঁচেট গড়ের জমিদাররা ছিলেন সঙ্গীত, শিল্প ও ধর্মের সত্যিকারের সহযোগী। রাজবাড়ির সেন্ট্রাল হলকে "দ্য জলসাঘর" (যেখানে জলসা পরিবেশন করা হত) বলা হয়। এখানে এক সময় ভারত বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন। পঁচেট গড় এক সময় ভারতীয় ভক্তি সঙ্গীত ও কীর্ত্তনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল। চৌধুরী উপেন্দ্র নন্দন দাস মহাপাত্র, চৌধুরী যোগেন্দ্র নন্দন দাস মহাপাত্র এবং চৌধুরী জিতেন্দ্র নন্দন দাস মহাপাত্রের মতো পরিবারের সদস্যরা ভারতীয় সংগীতের বিভিন্ন ঘরনার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সেকালে দেশের হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম আসন ছিল পঁচেটগড়। হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিভিন্ন রূপের বিকাশ ও প্রসারে এর অবদান এতটাই মহান, যে আমরা দেখতে পাই, এর অতীত ইতিহাসের মধ্যে। এখনও, হিন্দুস্তানি ক্লাসিক্যাল সংগীতের ক্ষেত্রে পঁচেটগড়ের আসল প্রভাব এবং উদ্দীপনা খুঁজে বের করার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সক্রিয় গবেষণা চলছে।
যাদু ভট্ট (যদুনাথ ভট্টাচার্য) বাংলার অন্যতম "বিষ্ণুপুর ঘরানা" থেকে বেরিয়ে আসা সবচেয়ে বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ। যদু ভট্ট ছিলেন ধ্রুপদের গুরু এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের "ধ্রুপদ খন্দরবানি" রূপ। তার প্রথম তালিম ছিল তার পিতা মধুসূদন ভট্টাচার্যের কাছ থেকে এবং পরে গঙ্গানারায়ণ চট্টোপাধ্যায় থেকে যিনি বিষ্ণুপুরের রাজার রাজ সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। "বিষ্ণুপুর ঘরানা" এর প্রধান পতাকা বহনকারী, যা পরবর্তীতে "মাইহার ঘরানা" এবং "গয়া ঘরানা" হিসাবে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। ধ্রুপদ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে বাংলার অবদান। যদু ভট্ট পঞ্চেতগড়ের রাজবাড়ীর প্রধান সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন কিছু সময়ের জন্য। তিনি পঞ্চেতগড় রাজপরিবারের কিছু সদস্যকে সঙ্গীতও শিখিয়েছিলেন। যদু ভট্ট বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কেও গান শিখিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পঁচেটগড় রাজবাড়ি হেরিটেজ রাজবাড়ী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। পঁচেটগড় রাজবাড়ি মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দেবদেবীর মন্দির। খুলে দেবতা কিশোররাই জিউর মন্দির, পঞ্চরত্ন শীতলাদেবী মন্দির, শ্রী শ্রী পঞ্চেশ্বর শিব মন্দির।
Saikat Shee
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Purba medinipur