জামালপুর: সোমবার বন্ধ এবং তার পরিবর্তে রবিবার খোলা থাকে হাইস্কুল। বিগত ১০১ বছর ধরে এই নিয়মই পালিত হয়ে আসছে এই স্কুলে। সাধারণভাবে অন্যান্য স্কুলে সপ্তাহে সাত দিনের মধ্যে সোম থেকে শনিবার স্কুল খোলা থাকে, এবং রবিবার বন্ধ থাকে স্কুল। কিন্তু পূর্ব বর্ধমানের এই স্কুল ব্যতিক্রমী। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকে অবস্থিত এই স্কুলের নাম গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই এই নিয়ম পালিত হয়ে আসছে।
আরও পড়ুনঃ ভয়ানক পথ দুর্ঘটনার শিকার শিশু! সন্তানের মৃত্যুর পরই প্রাণ হারালেন মা
তবে এই নিয়মের পিছনে রয়েছে এক বড় ইতিহাস। এই প্রসঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, এই নিয়মের একটা সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে । এবং এই স্কুলের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে স্বাধীনতার এক অধ্যায় জড়িয়ে আছে । গান্ধিজির নেতৃত্বে সারা দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে , সেই অসহযোগ আন্দোলনের মূল নীতি ছিল বিদেশি দ্রব্য বর্জন, বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্জন, বিদেশি ভাষা বর্জন, এবং তার সঙ্গে দেশীয় জিনিস ব্যবহার , দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি । তখন এই গান্ধিজির অসহযোগ আন্দোলনের ভাবাদর্শে দীক্ষিত হয়ে এই গ্রামেরই বিখ্যাত মানুষ এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এবং ইংরেজরা যেহেতু তাদের প্রতিষ্ঠানগুলিকে রবিবার বন্ধ রাখতেন , শুধুমাত্র স্বদেশী ধারাটাকে অক্ষুন্ন রাখার জন্য তিনি রবিবার স্কুল খোলা রাখতেন এবং তার পরিবর্তে উনি সোমবার ছুটি দিয়েছিলেন। সেই থেকেই এই ধারাটা চলে আসছে।
আরও পড়ুনঃ সন্ধ্যাবেলায় শ্যুটআউট, ভয়ে কাঁপছে শক্তিগড়
এই স্কুল প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যাদের নাম জড়িয়ে আছে তাঁরা হলেন ভূষণ চন্দ্র হালদার এবং অবিনাশচন্দ্র হালদার । স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ সম্পূর্ণটাই অবিনাশ বাবুর এবং তাঁকে সাহায্য করেছিলেন বা তাঁর দেখানো পথ অবলম্বন করেছিলেন ভূষণ চন্দ্র হালদার। এবং আর্থিকভাবে সাহায্যের জন্য যারা এগিয়ে এসেছিলেন তাঁরা হলেন রাজবল্লভ কুমার এবং বিজয়কৃষ্ণ কুমার । মূলত এনাদের উদ্যোগেই এই বিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল । ১৯২২ সালের ৫ই জানুয়ারি এই স্কুল স্থাপিত হয়েছিল । বর্তমানে এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৯৭২ জন ।
দীর্ঘ প্রাচীন এই নিয়মের সঙ্গে পড়ুয়ারাও তাঁদের মনিয়ে নিয়েছে, এই প্রসঙ্গে স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আতিফ মল্লিক জানায়, ‘আমার রবিবার স্কুল আসতে ভাল লাগে এবং আমার বন্ধুরা সবাই আসে । এবং আমাদের সোমবার ছুটির কারণে অনেক সুবিধাও হয় ,যেমন সরকারি কোনও কাজ থাকলে সেটা সোমবার করা যায়, রবিবার ছুটি থাকলে সেই কাজ করা যেত না।’
১০১ বছরের পুরনো এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষিকা থেকে শুরু করে পড়ুয়া সকলেই এই নিয়মের সঙ্গে যথেষ্ট স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন । আর জানা যায় সরকার থেকে প্রথম দিকে এই নিয়মের কারণে আপত্তি জানালেও, কাগজপত্র দেখার পর এবং ইতিহাস সম্পর্কে জানার পরে পরবর্তীতে আর কোনও সমস্যা হয়নি ।
Banoarilal Choudhuryনিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: East Bardhaman news