#পূর্ব বর্ধমান : প্লাস্টিক বা পলিথিনের ট্রে-তে বিশেষ পদ্ধতিতে ধানের চারা তৈরিতে আগ্রহী হয়েছে চাষীরা। খরচ কমে এই পদ্ধতি বর্তমানে চাষীদের কার্যত হাতে স্বর্গ পাওয়ার মতোই। বাড়ির উঠানে , ছাদে বা কোনও খোলা জায়গায় চাষীরা ধানের চারা তৈরি করতে পারছেন। এতে খরচও কম পাশাপাশি জলের প্রয়োজনীয়তাও তুলনামূলক কম লাগে। তাই ট্রে-তে ধানের চারা তৈরি করাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন শোস্য গোলা পূর্ব বর্ধমান জেলার চাষীরা। ভাতার ব্লকে, গলসি দুই, বর্ধমান এক ব্লকের চাষীরা এই চাষে আগ্রহী হয়েছেন। তবে অন্যান্য জায়গাতেও যাতে চাষীরা ট্রে তে চারা লাগান তার জন্য উদ্যোগী হয়েছে কৃষি দফতরের আধিকারিকরা। মূলত আমন মরশুমে এই ট্রে-তে চারা তৈরি বেশি লক্ষ্য করা যায়। বোরো মরশুমেও এই পদ্ধতি জনপ্রিয় করার চেষ্টা চলছে বলে জানান কৃষি দফতরের আধিকারিকরা।
কৃষি দফতর ও ফার্মের জয়েন্ট ডিরেক্টর শুভেন্দু হাজরা বলেন, "কৃষকরা নিজের বাড়ির আশপাশেই এই ট্রে-তে ধানের চারা তৈরি করতে পারেন। ফলে নানা দিক থেকে লাভবান হন তাঁরা। যেমন জায়গা কম লাগছে তেমনই খরচও কম। এছাড়াও এই পদ্ধতিতে লোক-বল কম লাগে। চারা তৈরি করার পর রোপণ যন্ত্রের সাহায্যে কৃষকরা চারা রোপণ করতে পারেন কিংবা হাতেও রোপণ করা যেতে পারে। ট্রান্স প্লান্টার বা যন্ত্রের সাহায্যে রোপণ করলে কোনও জন মজুরের দরকার হয় না। ফলে বেশিরভাগ কৃষকরা এই যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন।। তবে যদি কেউ জন মজুর দিয়েও রোপণ করান তাহলেও দেখা গেছে প্রায় ৪০ শতাংশ মতো মজুরের খরচ কম হয়।" তিনি আরও বলেন, "বর্তমানে অনেকেই সমতল জায়গায় ট্রেগুলি সাজিয়ে না রেখে বাস বা কাঠের তৈরি র্যাক ব্যবহার করছেন। জাত অনুযায়ী ১৮ থেকে ২০ দিনের মধ্যে চারা রোপণের উপযুক্ত হয়ে যায়। তবে যদি ২৫ দিনের বেশি হয়ে গেলে রাসায়নিক সার দেওয়া জরুরি।"
কি ভাবে চাষীদের এই ট্রে পদ্ধতির প্রশিক্ষন দেওয়া হয় এ বিষয়ে শুভেন্দু বাবু বলেন, ২০১৯ সালে যখন শুরু হয়েছিল তখন চাষীদের প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে। এখন যদি কোনও চাষী ট্রে পদ্ধতি ব্যবহার করতে চান তাহলে তিনি যোগাযোগ করতে পারেন ব্লক অফিসে। জেলার প্রতিটি ব্লক অফিসে আধিকারিকরা আছেন যারা চাষীদের প্রয়োজনীও তথ্য দিয়ে দেবেন।
স্থানীয় এক কৃষক দীনেশ চন্দ্র সেন বলেন, " বাড়ির উঠানে চারা তৈরি করছি আমন মরশুমে। তিনি ট্রে তেই চারা তৈরি করে বেশি লাভবান হচ্ছেন। সাধারণত যে খরচ হয় সেই তুলনায় অনেক কম খরচ হচ্ছে ট্রে তে চারা তৈরি করে। ৪০০ টি মতো ট্রে রয়েছে, এরমধ্যে ২০০ টি ট্রে কৃষি দফতর থেকেই দেওয়া হয়েছে। সাধারণত এক বিঘা জমিতে রোয়া করতে গেলে কেউ জমিতে ধান ফেলেন ছয় কেজি কেউ সাত তো কেউ আট কেজি। তবে এই পদ্ধতিতে ট্রে-তে ধান দিতে হয় মাত্র দু কেজি। আর এই ট্রে পদ্ধতিতে ধান রোয়াতে লোক লাগে চার জন। কিন্তু সাধারণ ভাবে ধান রোয়াতে লোক লাগে ছয় থেকে সাত জন। ফলে সব দিক থেকেই লাভ হয়।"
এবার জেনে নেওয়া যাক কি ভাবে ট্রে পদ্ধতিতে ধানের চারা তৈরি করা যাবে
বাজারে কিনতে পাওয়া যায় চারা তৈরির ট্রে, সেই ট্রে-তেই প্রথমে অর্ধেক পরিমাণ জৈব সার ও অর্ধেক পরিমাণ ঝুর ঝুরে মাটি দিতে হবে। ট্রে মূলত হয় দু ফুট লম্বা ও এক চওড়া হয়ে থাকে। এরপর ধানের বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে, ৮০ থেকে ১২০ গ্রাম পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে বীজ। জাত অনুযায়ী এই পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এবার ধানের বীজের উপর আবার দিতে হবে ঝুর ঝুরে মাটি। সারিবদ্ধ ভাবে রেখে দিতে হবে ট্রে গুলি। এরপর খর চাপা দিয়ে জল দিতে হয় ট্রের উপর। মনে রাখতে হবে জল তাও হালকা হতেই। আবার পরদিন ভেজাতে হবে খরগুলি।
আরও পড়ুন: তারকা বৃষ্টিতে ভাসল করণ জোহরের ৫০-তম জন্মদিন! রইল ছবি
৩৬ ঘণ্টা থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর খর সরিয়ে ফেলতে হবে। দেখতে পারবেন হালকা সবুজ হলুদ হয়েছে ধানের চারা গুলি। এরপর জল দিতে হবে পরিমাণ মত। বৃষ্টি হলে বীজের গ্রোত ভালো হবে , না হলে গ্রোত কম হবে। বৃষ্টি হলে বীজের রোয়ানোর মতো হয়ে যাবে ১২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে নাহলে প্রায় ১৬ দিন লাগবে। এরপর আপনি চাইলে মেশিন ব্যবহার করে অর্থাৎ ট্রান্সফরমার মেশিন দিয়ে ধান রোয়াতে পারেন না হলে হতেও রোয়াতে পারেন। কাদা তৈরি করে ছিপ ছিপে জল রাখতে হবে জমিতে। চাইলে কাদা তৈরির পর একদিন হাতে সময় নিয়েও রোয়াতে পারেন।
Malobika Biswas
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Burdwan, Burdwan news